২১ আগস্ট হামলার আগে তারেক ১০ মাস ধানমণ্ডিতে ছিল: প্রধানমন্ত্রী

গ্রেনেড হামলা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২১ আগস্ট হামলার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, আমি বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবো না। গ্রেনেড হামলার পর প্রকাশ হতে শুরু করে, কেন খালেদা জিয়া এ কথা বলেছিলেন। খালেদার পুত্র তারেক রহমান ধানমণ্ডি ৫ নম্বরে তার শ্বশুরবাড়িতে একটানা দশ মাস ছিল; ১ আগস্ট সেনানিবাসের বাসায় ফিরে যায়। তারেক রহমান কেন ছিল সেখানে? ষড়যন্ত্রের সুবিধায়? তাদের প্রতিটি বক্তব্যে আভাস ছিল আমাকে হত্যার।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে রবিবার ‘বঙ্গবন্ধু এভিনউ’-এ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আগে শেখ হাসিনা গ্রেনেড হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিশ্ব-বিবেককে নাড়া দিয়েছিল; কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে নাড়া দেয়নি। উল্টো তারা বললো, হামলার ঘটনা আমরাই ঘটিয়েছি। আমার প্রশ্ন, আমরা কি সেদিন সেখানে সুইসাইড করতে গিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় মানবতাবিরোধী ঘটনার পরও সংসদে কথা বলতে দেয়নি বিএনপি সরকার। আমি তখন বিরোধীদলীয় নেতা। কি দুর্ভাগ্য, নিন্দা প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি সংসদে। এতেই স্পষ্ট হয়, কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হয়নি।’

মৃত্যুকে ভয় পাই না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে পরোয়া করি না। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করি না। মরতে হবে, কিন্তু মরার আগে মরতে আমি রাজি নই। কারণ আমি জাতির পিতার কন্যা। সেই পিতার কন্যা হিসেবে রাজনীতিতে আমার একটাই লক্ষ, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। রাজনীতির একটাই শক্তি, জনগনের কল্যাণ করা।’

২১ আগস্টের হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলার মাটিতে পা রাখার পর বারবার হামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে। যেখানে গেছি গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কখনই মৃত্যুভয় ছিল না আমার।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওই দিন ভয়াবহ এ হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞাত মারা গেছে দু’জন। জানিনা তারা কারা। হামলাকারীও হতে পারে। এতবড় একটি ঘটনা ঘটলো, পুলিশ ছিল নিরব। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ, আহত মানুষের আর্তনাদ। অবাক লাগে, এত বড় ঘটনার পরও পুলিশের কোনও তৎপরতা ছিল না। তারা আহতদের উদ্ধার না করে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। আমি জানি না, পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হামলাকারীরা যাতে নিরাপদে চলে যেতে পারে, সে জন্য টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। একটি ঘটনা ঘটলে সরকার আলামত সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে। কিন্তু তারা আলামত নষ্ট করেছে। কোথাকার কোন গ্রামের একজনকে ধরে জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্ট হাসপাতালগুলোতে বিএনপিপন্থী একজন ডাক্তারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

বিদেশি শক্তি এখনও চক্রান্ত করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই না বাংলাদেশে এ ধরনের হামলা আর হোক। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আমরা চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশের উন্নয়ন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা যখন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি, সেখানে তারা মদদ দিচ্ছে। নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিছু বিদেশি শক্তি, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা এখনও চক্রান্ত করছে।’

 /পিএইচসি/এআরএল/

আরও পড়ুন: 

ফরিদপুরে টর্নেডোর আঘাতে জুট মিল ধসে ৫ কর্মীর মৃত্যু, আহত শতাধিক