X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৮ মে ২০২৪, ২২:৪৫আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ২২:৪৫

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ মে দুই দিনের সফরে আসবেন তিনি। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।

প্রায় তিন দশক পর অস্ট্রেলিয়ার কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফরে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের জন্য এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ বেড়েছে। একদিকে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। অপরদিকে ভারত মহাসাগর অঞ্চল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থানের কারণে বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। বর্তমান বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে এবং তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক দুই পক্ষের জন্য লাভজনক হবে।’

সব মিলিয়ে দুই পক্ষের ক্ষেত্রে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য এটি ভালো সময় এবং আমরা এটিকে কাজে লাগাতে কাজ করছি বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস পেন সুনীল অর্থনীতিবিষয়ক একটি বহুপক্ষীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বাংলাদেশে এসেছিলেন, তবে সেটি দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। কিন্তু ওই সময় থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের রূপান্তর শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন।

সম্পর্কের রূপান্তর

বাংলাদেশকে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে সবসময় দেখে এসেছে অস্ট্রেলিো। এমনকি ২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক রিপোর্টে  ‘মানবিক সহায়তা পায়’ বাংলাদেশকে এমন দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু এরপর থেকে বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসে। অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের ডেভিড ব্রিউস্টার ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক কৌশলগত স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর একটি প্রবন্ধে লেখেন। ওই বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ’ (কি পার্টনার কান্ট্রি) হিসেবে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য, ওই একই রিপোর্টে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে কোভিডের জন্য সহায়তা দেওয়া দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া আমাদেরকে যে লেন্স দিয়ে দেখে, সেটি পরিবর্তনের জন্য আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করি, যা পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত সফল হয়।’

২০১৯ সালে তৎকালীন আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমানের সফর অত্যন্ত তাৎপর্য ছিল এবং এর দুই বছরের মধ্যে তিন বাহিনীর প্রধানও অস্ট্রেলিয়া সফর করেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান যে, এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসে ডিফেন্স উইং খোলা হয়। 

ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য

গত এক দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালো দিক হচ্ছে, এই হার উভয় দেশের জন্য বেড়েছে। অর্থাৎ উভয়ই একে অপরের বাণিজ্যে অবদান রাখছে।

এ বিষয়ে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ছয় বছর আগেও দুই দেশের বাণিজ্য ছিল ১৪০ কোটি ডলার, যা এখন প্রায় ৪০০ কোটি ডলারে পৌছেঁছে।’

অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয় ২০১৯ সালে এবং এরপর অস্ট্রেলিয়া সিদ্ধান্ত নেয়— বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ হলেও ততদিন পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখবে, বলে জানান এই সাবেক কূটনীতিক।

অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাথমিক পণ্য (প্রাইমারি গুডস) আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে, কৃষিজাত পণ্য, বিভিন্ন ধরনের ধাতু ও খনিজ পদার্থ (মেটাল ও মিনারেলস), তুলা, উলসহ বিভিন্ন পণ্য। এই আমদানি বাংলাদেশের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে বলে তিনি জানান।

সাবেক এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লোহা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রয়োজন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ লোহা, কপার ও জিঙ্ক মাত্র ছয় কোটি ডলারের আমদানি করতো। মাত্র চার বছরের মধ্যে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ কোটি ডলার। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার তুলা ও উল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহার করা হয়।’

‘বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এ ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০০ কোটি ডলার ছাড়াবে বলে আশা যায়’, বলে তিনিউল্লেখ করেন।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনে কোয়াড বৈঠক, প্রশ্নের মুখে ঐক্য
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ
টুভালুর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রত্যাশী
সর্বশেষ খবর
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সনদের বাস্তবায়নে জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি: নাহিদ ইসলাম
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সনদের বাস্তবায়নে জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি: নাহিদ ইসলাম
কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে নিজেই অপসারিত শাহীন!
কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে নিজেই অপসারিত শাহীন!
‘ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনও দল থাকবে না’
‘ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনও দল থাকবে না’
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড