আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, তার ডান হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই খোলা হাত দিয়ে মেয়ে তাহিরার সঙ্গে বল খেলছেন তিনি। কাছে গিয়ে বসতেই বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি মেয়ের সঙ্গে খেলব আবার। কিন্তু আজ সত্যি সত্যি খেলতে পারছি মেয়ের সঙ্গে।’ চিরুনির মতো করে হাত চুলের মধ্যে বুলাতে বুলাতে বলেন, ‘নিজের হাতে চুলও আঁচড়াতে পারছি।’
হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানাই বাজানদারকে। এরপর কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আছে চাইলের (চাউল) ব্যবসা করার। কিন্তু আমার তো টাকা-পয়সা নেই। সবার সহযোগিতায় এ পর্যন্ত এসেছি। এভাবেই যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে এই ব্যবসা করে বাবা-মা, ছোট বোন আর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে কিছু করে খেতে পারব।’ কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে বাজানদার বলেন, ‘এতদিন আমি কিছু করতে পারতাম না। বাবা অন্যের ক্ষেতে কাজ করে আমাদেরকে টেনেছে। কিন্তু গত দেড় মাস আগে তার স্ট্রোক হয়। তিনি নিজেই এখন অসুস্থ। তাহলে আমাদের পরিবারের কী হবে? এতগুলো মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে সেই চিন্তাই করছি এখন।’
চাউলের ব্যবসা করার চিন্তা কেন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছি এই ব্যবসা করতে। আমার বয়স তখন ১২/১৩ বছর। তখন বাবাকে ব্যবসায় সাহায্যও করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও রয়েছে। আর আমি তো কষ্টের কোনও কাজ করতে পারব না। বসে বসে যদি এই কাজটা করতে পারি তাহলে সবাইকে নিয়ে বাঁচতে পারব। আর মেয়েটাকেও মানুষ করতে চাই। লেখাপড়া শিখিয়ে চিকিৎসক বানাতে চাই। দরিদ্র মানুষকে যেন সে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে পারে সে স্বপ্ন দেখছি এখন।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজানদারের দেখা করতে চাওয়ার ইচ্ছায় সায় দিলেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেনও। তিনিও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে আমার ইচ্ছা আছে তার কাছে বাজানদারকে নিয়ে যাওয়ার। প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী বাজানদারের বিষয়ে সবসময় খোঁজ নিয়েছেন। তার চিকিৎসার বিষয়ে সব কিছু জানেন তিনি।’
বাজানদারকে কবে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘তার ডান হাত খুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু দুই পায়ে ছোট ছোট কয়েকটি অপারেশন বাকি আছে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে।’ ডা. সামন্তলালের মতে, বাজানদারের সুস্থ হয়ে ওঠা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতির প্রমাণ।
আরও পড়ুন-
এত খুশির ঈদ এই প্রথম: বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার
মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদলেন ‘বৃক্ষমানব’
/টিআর/এএআর/