লেখক-প্রকাশকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ও পাঠক। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ওই সময়ের জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এই সময়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও বেড়েছে। কিন্তু ৩৫-৪০ বছর আগে যে প্রত্যাশা নিয়ে বইমেলার শুরু, তা শতভাগ পূরণ হয়নি বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, আগে বইমেলার যে গাম্ভীর্য ছিল তা এখন কমে এসেছে।
লেখক-সাংবাদিক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন প্রকাশকরা চায় সংখ্যা বাড়াতে, মান নয়। এখনকার বইমেলায় হুজুগের মতো করে বই বের হয়। আগে অল্প বই বের হলেও তা ছিল মানসম্পন্ন। এখন বইমেলায় অংশ নিতে নির্দিষ্টসংখ্যক বইও লাগে। কিন্তু অনেক যাচ্ছেতাই বইয়ের চেয়ে ভালো বই অল্পও ভালো।’
গতকাল মঙ্গলবারও (২১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল মেলায়। অনেকেই এসেছিলেন সপরিবারে। অন্য দিনগুলোর তুলনায় এদিন মেলায় বিক্রিও ছিল বেশি। তবে লোকসমাগমের তুলনায় মানুষের হাতে হাতে বইয়ের সংখ্যা ছিল কমই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের দিনগুলোতে মেলায় প্রকৃত পাঠকদের উপস্থিতিই ছিল বেশি এবং তাদের সবার হাতেই থাকত বই।
মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঠক বেড়েছে। অনেকগুণ বেড়েছে। জনসংখ্যাও তো বেড়েছে। বইয়ের বাজারও বেড়েছে। তবে সেটা সৃজনশীল বা মননশীল বইয়ের চেয়ে টেক্সটবুকই সেই বাজার বেশি দখলে রেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে প্রকাশকও কম ছিল, বই প্রকাশ হতো কম। এখন প্রকাশকের সঙ্গে বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।’
দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশনা ব্যবসায় সম্পৃক্ত মাহমুদুল হক বলেন, ‘অনেক অনেক চকচকে বই প্রকাশিত হচ্ছে। এসব বই পাঠকদের প্রলোভিত করছে। কিন্তু এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এতে পাঠক ঠকছে, বইয়ের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলছে। আর প্রকাশকরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ পাঠকরা ওই প্রকাশকদের বই কিনতে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। এটা সার্বিকবাবে প্রকাশনা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।’
জাকির তালুকদার আরও বলেন, ‘বর্তমানের বইমেলায় প্রকাশকদের এক ধরনের অসাধু ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। এতে মানহীন বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এই মান ঠিক করবে কে? এটা ঠিক করার কথা প্রকাশকদের, কিন্তু তারা তা করছেন না। ফলে মেলার পরিসর বাড়লেও এতে আদৌ লাভ হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।’
গত কয়েক ব্ছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বইমেলায় প্রতিবছর তিন থেকে চার হাজার নতুন বই ছাপা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এত বইয়ের মধ্যে তিন থেকে চারশ বই মানসম্মত। বাকিগুলো শুধু সংখ্যা বাড়াতে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে কারও লাভ হচ্ছে না। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক অবশ্য ততটা হতাশ নন। তিনি বলছিলেন, ‘ক্রমান্বয়ে বইয়ের কাটতি বেড়েছে। আমি মনে করি, সৃজনশীল বা মননশীল বইয়ের বাজার আরও বাড়বে। এটা সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ এছাড়া, এখনকার মেলায় আন্তর্জাতিক ছাপ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
আরও পড়ুন-
ফেসবুকজুড়ে একুশের গান, একুশই প্রাণ