পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা মডেল

ব্রহ্মপুত্র নদপানি সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ব্রহ্মপুত্রের একটি অববাহিকা মডেল তৈরি করছে বিশ্বব্যাংক। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এই অববাহিকা মডেল থেকে জানা যাবে ব্রহ্মপুত্র নদের অতীত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে কী পরিমাণ পানি থাকতে পারে এবং এর কতটুকু ব্যবহার করা সম্ভব। এই মডেলের মাধ্যমে তাই ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে জড়িত চারটি দেশ— বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ভুটান কী পরিমাণ পানি ব্যবহার করবে বা উত্তোলন করবে, তার একটি হিসাব পাওয়া সম্ভব হবে।

ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা মডেল তৈরির দলনেতা আহমেদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি অবারিত সম্পদ নয়। প্রতিটি দেশেরই উচিত এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যেই আমরা এমন একটি মডেল তৈরি করছি যেন ব্রহ্মপুত্র নদের অতীতের উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের একটি সম্ভাব্য চিত্র পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয়।’

উদাহারণ হিসেবে এই পানি গবেষক বলেন, ‘আমাদের কাছে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের উপাত্ত আছে। অববাহিকা মডেলের মাধ্যমে এ উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব আগামী কয়েক বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহের কী অবস্থা হবে। খরা হবে কিনা, আগাম বন্যা হবে, নাকি দেরিতে বন্যা আসবে— এসব তথ্যও জানা সম্ভব হবে মডেল থেকে। ভবিষ্যতের এই চিত্র জানতে পারলে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশগুলো এর কতটুকু পানি ব্যবহার করবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কৃষিকাজ, সেচ ব্যবস্থা ও মৎস্য চাষের বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হবে।’

মডেল তৈরির কাজ শেষ জানিয়ে হাসান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এটি আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে জমা দেবো। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অন্য দেশগুলোও এই মডেল মেনে নেয়।’ তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক এ মডেলটির জন্য অর্থায়ন করছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার অবহিত।

অন্য দেশগুলো এই অববাহিকা মডেল মেনে নেবে কিনা, জানতে চাইলে হাসান বলেন, ‘বাকি তিনটি দেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম আছে এবং তারা নিজ নিজ দেশের অফিসের মাধ্যমে মডেলটির গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরবে।’ মডেলটি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ব্যবহারকারী দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার সূচনা করতে পারে বলে মনে করেন এই পানি বিশেষজ্ঞ।

পানি কূটনীতিতে অন্য দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজনকে সম্পৃক্ত করে নদী ব্যবস্থাপনা করা উচিত বলে মনে করেন ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা মডেল নির্মাতা দলের প্রধান আহমেদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘যেমন— ভারত বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে আসাম বা ত্রিপুরাতে পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করতে চাইলে বাংলাদেশকেও এসব নৌপথে পর্যাপ্ত পাণি থাকার নিশ্চয়তার দাবি তুলতে হবে দিল্লির কাছে।’

উল্লেখ্য, পানি প্রবাহের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদ ব্রহ্মপুত্র। প্রতিবছর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১ হাজার ৩৬০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে কেবল ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয় ৫৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার, যা মোট পানি প্রবাহের ৪১ শতাংশ। নদটি চীন থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা নদীর ওপর কোনও বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মাণ না করা হলেও এ নদীতে অন্য যেসব নদীর পানি এসে মিশেছে সেগুলোর ওপর ভারত ও চীন বাঁধ বা ব্যারাজ নির্মাণ করেছে।

/টিএন/টিআর/আপ-এসএনএইচ/