আবারও বলতে শুরু করেন তিনি,‘আমাকে উদ্ধারের জন্য কতজন যে চেষ্টা করেছিল, তা বলতে পারবো না। কতভাবেই না চেষ্টা করতে থাকে তারা। তবুও আমাকে বের করা যাচ্ছিল না হাতটা আটকে থাকার জন্য। এক সময় নিজেই তাদের বলি, আমাকে একটা করাত দেন। একজন একটি করাত এনে দেয়। করাত দিয়ে আস্তে আস্তে নিজেই হাতটা কেটে বিচ্ছিন্ন করলাম। এরপর উদ্ধারকর্মীরা আমাকে বের করে নিয়ে আসে। তারপর আর কিছু মনে নাই।’
তিনি বলেন, ‘ওভাবে আটকে থাকার পরেও আমার বারবার মনে হচ্ছিল ছোট বোন মর্জিনার কথা। আমরা দুই বোন পাশাপাশি কাজ করতাম। ভবন ভেঙে পরার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। তখন শুধু মর্জিনার কথাই মনে পড়তে থাকে। ও কি বেঁচে আছে না মরে গেছে তাই ভাবতে থাকি। আমি বেঁচে ফিরলেও তাকে আর খুঁজে পাইনি। কিছুদিন আগে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মর্জিনার লাশ শনাক্ত হয়েছে। তবে তার লাশ পাইনি, পেয়েছি কবর।’
রোজিনা জানান, খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার। স্বামীর একার উপার্জনের টাকায় ঠিক মতো সংসার চলছিল না। একটু স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় চাকরি নেন তিনি। শত কষ্টের মাঝেও সংসার গোছানোর স্বপ্নটা অল্প অল্প করে এগোচ্ছিল তাদের। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেছে তার সেই স্বপ্ন।পঙ্গুত্ব নিয়েই এখন জীবন কাটছে রোজিনার ।
রানা প্লাজার আরেক আহত শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন লস্কর। বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মসদই গ্রামে। রানা প্লাজার পাশের ভবনে একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল সেই ভবনের ওপরে। সেখানেও মারা গেছেন কয়েকজন। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।কিন্তু আহতাবস্থায় কেটে ফেলতে হয়েছে তার একটি হাত। এখনও তিনি সাভারের পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতিমাসে চিকিৎসা নিতে আসেন।
সাদ্দাম জানান, ‘নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পেলেও তা দিয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটান যাচ্ছে না। দেড় মাস চিকিৎসা শেষে বিদেশি একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে একটি কৃত্রিম হাত দেওয়া হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আমজাদের দুটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি দেড় বছর সাভারের পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসা নিয়ে সাভারের বক্তারপুর মহল্লার ভাড়া বাড়িতে ফিরেছেন। এরপর থেকে আর কেউ খোঁজ নেয়নি তার। আমজাদ বলেন, ‘চলতে ফিরতে পারছি না। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছি। এ বয়সে পরিবারকে আমারই সহযোগিতা করার কথা, অথচ আমি এখন তাদের সহযোগিতায় বেঁচে আছি।’
/এপিএইচ/
আরও পড়ুন-
রানা প্লাজা ধসের ৪ বছর: আজও শঙ্কা কাটেনি আহত শ্রমিকদের
রানা প্লাজার পিলার ভাঙতে শুরু করে দুর্ঘটনার আগের দিনই
রানা প্লাজা ধস: পঙ্গুত্বের কারণে ভেঙেছে অনেকের সংসারও
রানা প্লাজার তিন মামলা: বিচার বিলম্বিত যে কারণে
শত বাধা আর কষ্টেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা
ডায়েরি থেকে রেশমাকে উদ্ধারের অভিযান