কমলাপুরে লম্বা লাইন, ভিড় হবে মঙ্গলবারও

কমলাপুর রেল স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় (ফাইল ছবি)রাত ৩টায় রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনের কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন দক্ষিণ বনশ্রীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইরফানুল হক। তখনও তার আগে অন্তত ১৫-২০ জন দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে তিনি টিকিট হাতে পান। এ জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৬ ঘণ্টা। কমলাপুর রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় সোমবার (২১ আগস্ট) টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল বেশি। আগামীকাল মঙ্গলবার ভিড় আরও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় ইরফানের। তিনি বলেন, ‘একটি পরীক্ষার কারণে ৩০ তারিখে বাড়ি যেতে হচ্ছে। ট্রেন ছাড়া যাওয়ার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। বাসের টিকিট পাইনি। তাই ট্রেনের টিকিটের জন্য রাত তিনটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। টিকিট পেয়েছি সকাল পৌনে ৯টার দিকে। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করেছি, টিকিটটা হাতে পেয়ে যেন সব কষ্টই ভুলে গেছি।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘টিকিট পেতে এতো ভোগান্তি হতো না যদি কর্তৃপক্ষ সব টিকিট অনলাইনে ছেড়ে দিতো। আমরা যাত্রীরা অনলাইনে চেষ্টা করে দেখতাম। টিকিট পেলে পেতাম, না হয় পেতাম না। এতে আমাদের কষ্টও হতো না, সময়ও নষ্ট হতো না।’

শুধু ইরফান নয়, তার মতো এমন শতশত মানুষ ট্রেনের টিকিটের জন্য ভোর রাত থেকেই লাইনে অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আগের  দিনগুলোতে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি।

টিকিটপ্রত্যাশীরা বলছেন, বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলের সড়কের বেহাল দশা, তাই তারা রেলপথকেই বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া, ঈদে ছুটি কম থাকার কারণে ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিটের চাহিদাই বেশি। এই দু’দিন সড়কজুড়ে তীব্র জ্যামের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। রেলপথে জ্যামে আটকা পড়ার কোনও আশঙ্কা নেই। তাছাড়া, রেল ভ্রমণ আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী।

খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন মঞ্জু আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিইনকে বলেন, ‘ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। পত্রিকা বিছিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছিও। বাড়ি তো যেতে হবে, টিকিটও পেতে হবে। সে জন্যই কষ্ট সহ্য করেছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি ট্রেনের সংখ্যা ও কোচ বাড়ায় তাহলে আমাদের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।’

কমলাপুরের সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট হাতে থাকা পর্যন্ত ২৩ কাউন্টারের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে টিকিট বিক্রি করছি। এর মধ্যে দু’টি লাইন নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। যাত্রীরাও সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই টিকিটের জন্য ভোর, এমনকি গভীর রাত থেকেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য তাদের কষ্ট হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত আছেন।’

অনলাইনে টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ২৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে ভিআইপি ও রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে বিক্রির সংখ্যা বাড়ানো গেলে ভালো। যাত্রীদের দুর্ভোগ ও সময় কমবে। কিন্তু সঠিক ডিস্ট্রিবিউশনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’

২ সেপ্টেম্বর ঈদ হলে ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর থাকবে সরকারি ছুটি। সে অনুযায়ী ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিটের চাহিদাই বেশি। সোমবার বিক্রি হয়েছে আগামী ৩০ আগস্টের টিকিট। আগামীকাল মঙ্গলবার বিক্রি হবে ৩১ আগস্টের টিকিট।

সোমবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি লাইনের শুরু দেখা গেলেও কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তার কোনও দেখা মিলছে না। প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই দীর্ঘ সারি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেশি। মঙ্গলবার এই ভিড় আরও বাড়বে।

কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইন, ৫ শতাংশ ভিআইপি ও ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, ঈদফেরত যাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৫ আগস্ট থেকে। শুরুর দিন পাওয়া যাবে ৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। ঈদ সামনে রেখে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন দেওয়া হবে। ট্রেনগুলো ঈদের আগের চার দিন ও পরের সাত দিন চলবে।