রোহিঙ্গারাই করছে নিজেদের তালিকা

রোহিঙ্গাদের করা তালিকামিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের তালিকা করেছে। নতুন আশ্রয়কেন্দ্র ও নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের এ তালিকায় পরিবার প্রধান ও তাদের সদস্য সংখ্যা উল্লেখ করা হচ্ছে। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ তালিকার কপি আছে। তবে এ তালিকা শেষ করতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
ইতোমধ্যে নতুন আসা রোহিঙ্গারা নিজেরা কমিটিও করেছে। এই কমিটিতে একজন চেয়ারম্যান ও ১০ জন সদস্য রয়েছেন। সদস্যরা চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করবেন। বালুখালী, পালংখালি, কুতুপালং ও ঘুমধুমে এ তালিকা করতে দেখা গেছে।

রাখাইন রোহিঙ্গা শরণার্থী কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মো. আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তালিকা করা শুরু করেছি। যারা বিভিন্নভাবে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নাম ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।’

রোহিঙ্গাদের করা তালিকাবালুখালী পাহাড় থেকে কুতুপালং রেজিস্টার ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি পাহাড়ে কোরবানির পর আশ্রয় নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এসব এলাকায় ছোটছোট ঘর তৈরি করে একসঙ্গে চার-পাঁচটি পরিবার থাকা শুরু করেছে। এ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকেই রোহিঙ্গারা তালিকা শুরু করছে। নিয়মিত সাহায্য পাওয়ার জন্যই এ তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বালুখালী পাহাড়ে আব্দুল কালম নামের এক ব্যক্তিকে খাতায় তালিকা করতে দেখা গেছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে যারা থাকছেন তাদের পরিবারপ্রধানের নাম লেখা হচ্ছে। পরিবারের কতজন সদস্য আছে সে সংখ্যাও লেখা হচ্ছে। ২০টি ঘর এককেটি গ্রাম বা ইউনিট ধরে এ গ্রামে একজন দায়িত্বে থাকবেন। গ্রামপ্রধান এ পরিবারগুলোর সমস্যার কথা বলবেন। তাছাড়া কতজন রোহিঙ্গা এ এলাকাতে আছেন তারও একটি ধারণা পাওয়া যাবে।’

কালাম বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের কাছে নাম চেয়েছে। সেজন্য এ তালিকা করা হচ্ছে।’

রোহিঙ্গাদের করা তালিকাএদিকে, তমব্রু পাথরকাটার কোনাপাড়া এলাকায় নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তালিকা তৈরি করা শুরু করেছেন। তারা একটি কমিটিও করেছেন, এই কমিটির প্রধান বা চেয়ারম্যান মৌলভী আরিফ। কমিটিতে আরও দশজন সদস্য রয়েছেন। তারা চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করবেন।

মৌলভী আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনাপাড়া নোম্যান ল্যান্ডে ১২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। ছয় হাজারের তালিকা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে সবাইকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারাশুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দেখা গেছে, নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা এখনও পালংখালি ও বালুখালীর পথে পথে বসে আছেন। কেউ কেউ গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে কয়েক দফায় বৃষ্টিতে তারা ভিজেছেন। কিন্তু মাথাগোজার কোনও জায়গা তারা পাচ্ছেন না তারা। ইতোমধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্করা বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

মংডুর বলিবাজার এলাকা থেকে এসেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা পরিবারের ১২ জন পায়ে হেঁটে এসেছেন। তার স্ত্রীর নাম ফাতেমা। চার সন্তান ও নিজেরা দু’জন ছাড়াও ভাইবোন রয়েছেন। আমার ১২টি গরু ছিল। পাঁচ কানির মতো জমিতে আবাদ করেছিলাম। সব রেখে চলে এসেছি। এখন আমরা রাস্তায়, টাকা নেই, তাই কোনও ঘর তুলতে পারিনি।’
আরও পড়ুন:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে: যুক্তরাষ্ট্র

চেহারা ও ভাষার মিল থাকায় চট্টগ্রামে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শতবর্ষী হাজমা খাতুনের মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা (ভিডিও)

বন্যায় নষ্ট হয়েছে ৬ লাখ হেক্টর জমির ফসল

‘জঙ্গি আস্তানা’য় বিস্ফোরণের ধ্বংসস্তূপ