‘জিয়া কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিলেন, জনগণের গণতন্ত্র নয়’

ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জনগণের গণতন্ত্র নয়, কারফিউ গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, জিয়া গণতন্ত্র দিয়েছে। সেটা তো কারফিউ গণতন্ত্র, জনগণের গণতন্ত্র নয়। তাদের জন্য এত কান্না আসে কোথা থেকে? তারা জ্বালাও-পোড়াও না করলে তো বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত।’
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান মারা গেছেন। তার ছেঁড়া প্যান্ট আর সুটকেসের ছবি ৪০ দিন ধরে দেখানো হলো বিটিভিতে। কিন্তু তারপর কী বের হলো! সারাবিশ্বে তাদের সম্পদের পাহাড়। কত ফ্ল্যাট, কত গাড়ি, কত বাড়ি তাদের। দুর্নীতিই ছিল নীতি। মানুষ খুন করারই কাজ। তাদের জন্য এত মায়াকান্না কেন? দেশকে তারা কী দিয়ে গেছে?’
দেশের জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি কেন এগিয়ে আসে না, ব্রিফিংয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের স্বকীয়তা আছে। তাদের নিজেদের চিন্তা-চেতনা আছে, নীতি-আদর্শ আছে। তারা নিজেরা যেটাকে যৌক্তিক মনে করে, সেটাই করছে। তারা কোথায় আসছে বা আসছে না, সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমার না। বিএনপি কেন জাতীয় ইস্যুতে এগিয়ে আসে না, সেটা বিএনপি নেতারা বলতে পারবেন। আমি তো বিএনপির নেতৃত্ব দেই না। এই প্রশ্ন আমাকে কেন করছেন?’
রোহিঙ্গা সংকটে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে কতটা সহযোগিতা করছে, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান উদ্ধৃত করে বলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে। কে আসবে বা কে আসবে না, তা নিয়ে ভাবি না। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রোহিঙ্গা ইস্যুতে যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। আর বিএনপি রাজপথের বিরোধী দল, তারা রাজপথেই আছে। তারা তো কেবল দোষ খোঁজে। তার মাধ্যমে আমরা নিজেদের ঘাটতিগুলোও বুঝতে পারি। সেদিক থেকে তারা গঠনমূলক কাজই করছে। আর এটাও ঠিক, তারা কোনোদিনই সহানুভূতিশীল দল ছিল না।’
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল, লাশ ভেসে বেড়াচ্ছিল। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। কিন্তু তারা জানতই না যে চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে এতবড় ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। তাই কোনও প্রস্তুতিও তাদের ছিল না। তখন সংসদ চলছিল। আমাদের কাছে ওই অঞ্চলের মানুষেরা ফোন করে বলেছেন, তারা তো শেষ হয়ে গেছেন। সংসদে এ কথা বললে তারা অস্বীকার করলো। তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বললেন, তত মানুষ মরেনি। আসলে তারা তো ভোগের রাজনীতি করে। টাকা চুরি, মানি লন্ডারিং, স্মাগলিং করে অঢেল টাকার মালিক হয়েছে। দেশের মানুষের কী হলো, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু আমরা রোহিঙ্গা সংকটে সাধারণ মানুষের কাছে সাড়া পাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাশে পাচ্ছি। স্থানীয়দের পাশে পাচ্ছি। আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। জাতীয় ও স্থানীয় দুর্যোগ মোকাবিলা কমিটি কাজ করছে।’
আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য রাজনীতি করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শূন্য অবস্থা থেকে একটি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমার দেশে কিছুই নাই, মানুষ আছে, মাটি আছে। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। জাতির পিতা যে নীতি নিয়ে চলতেন, আমরা সেই নীতিতেই চলি। সে কারণেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলছে। আমি আনন্দিত যে আমাদের এখন বিশ্বব্যাপী সম্মানের চোখে দেখা হয়। আমি আমি হয়তো চিরকাল থাকবো না। কিন্তু আশা করব, সবসময় যেন এই মর্যাদা ধরে রাখা হয়।’
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি আপনাকে বলে, আপনার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেই হবে, বসতে পারবেন? কিন্তু আমাকে বারবার একই কথা বলা হয়। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তা-ও বসেছি। কিন্তু তাকে ফোন দিয়ে তো ঝাড়ি খেয়েছি। কোকো মারা যাওয়ার পর আমি সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রীকে তারা ঢুকতে দিলো না, বাড়ির দরজা থেকে ফিরিয়ে দিলো। ওই অপমান হজম করে ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে। এই ধরনের ছোটলোকি যারা করে, তাদের সঙ্গে কিভাবে বসবো?’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-

‘শান্তি-নিরাপত্তায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে’
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শেখ রেহানা