রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা বলছে জাতিসংঘ

কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি)

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘটিত রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করছে জাতিসংঘ। এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ অন্য কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে অভিহিত করলেও এই প্রথমবারের মতো তারা এটিকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ আক্টোবর) জাতিসংঘের প্রিভেনশন অফ জেনোসাইড এর বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা দিয়েং এবং রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর বিশেষ উপদেষ্টা  ইভান সিমোনোভিচ এক বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারকে রাখাইনে সংঘটিত ‘অ্যাট্রোসিটি ক্রাইম’ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে অ্যাট্রোসিটি ক্রাইম শব্দটির অর্থ উল্লেখ করা হয়- ‘গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, রাখাইনে গণহত্যা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সবাই বলছে রাখাইনে গণহত্যা হচ্ছে, আমরাও বলছি। গত ১০ আক্টোবর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা বিষয়ক অন্য একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পর রাখাইনে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং কয়েকশ’ গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গণহত্যার একটি আইনি সংজ্ঞা আছে এবং এজন্য এ অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে করা হলে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যা মানে হচ্ছে- কোনও জাতি, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ক্ষতিসাধনের জন্য নিম্নোক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা- ক. ওই গ্রুপের সদস্যদের মেরে ফেলা, খ. শারীরিক বা মানসিকভাবে ওই গ্রুপের মানুষদের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করা, গ. ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা, যাতে করে ওই জাতিটি সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়ে যায়, ঘ. জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ঙ. জোরপূর্বক ওই গ্রুপের বাচ্চাদের অন্য গ্রুপে প্রেরণ করা।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সংজ্ঞা অনুযায়ী জোরপূর্বক বাচ্চাদের অন্যত্র প্রেরণ বাদে চারটি ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।’

পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি জাতিসংঘের বিষয়। তবে আমরা আমাদের বিভিন্ন জায়গায় চিঠিপত্রে বা রিপোর্ট দেওয়ার সময়ে এর রেফারেন্স দিতে পারি।’

আরও পড়ুন: 

সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা শিশু: ইউনিসেফ