উত্তরের পর এবার দক্ষিণ সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচন নিয়েও সংশয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচন নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কেননা এরই মধ্যে ডিএসসিসি’র নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে। শুনানি চলমান ওই রিটে ১৮টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের নির্বাচন স্থগিত হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

ডিএসসিসি’র নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্থানীয় ভোটার আক্তার হোসেনসহ আট জন রিট দায়ের করেন। গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করা হয়। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) ১৮ জনকে বিবাদী করা হয়।

এদিকে ডিএনসিসি’র উপনির্বাচন স্থগিত চেয়ে পৃথক দুটি রিট দায়ের করেছিলেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। বেশকিছু যুক্তির ভিত্তিতে ওই রিটগুলো দায়ের করেন তারা। বুধবার হাইকোর্ট ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচন ও সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।

ডিএসসিসি’র নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত চেয়ে ওই রিটকারীরা তাদের যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, ডিএসসিসিতে ১৮টি ওয়ার্ড নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া এসব ওয়ার্ডের ভোটাররা কোনও মেয়রকে ভোট দিতে পারবেন না। এছাড়া কাউন্সিলররা নির্বাচিত হবেন মাত্র দুই বছরের জন্য, যা আইন অনুমোদন করে না।

পাশাপাশি যারা এবার হালনাগাদে ডিএসসিসি’র নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে পারবেন কিন্তু প্রার্থী হতে পারবেন না। এটা সংবিধান পরিপন্থী।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার ডিএনসিসি’র রিট আবেদনেও কিছু স্পষ্ট যুক্তি দেখিয়েছিলেন রিটকারীরা। ওইসব যুক্তির বিষয়ে তাদের আইনজীবী আহসান হাবিব ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আদালতও এই যুক্তিতে সহমত পোষণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসি’র উপনির্বাচনে এখন যিনি প্রার্থী হবেন তিনি কিন্তু জানেন না তিনি ভোটার কিনা। তাছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে সেটা সম্ভব নয়।’

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী মেয়রের পদসহ করপোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে করপোরেশন (এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে) যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

২০০৯ সালের আইনের ওই উপধারাটির কথা উল্লেখ করে আইনজীবী আহসান হাবিব আরও বলেন, ‘আইনে সব স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড মিলে কাউন্সিলর শতকরা পঁচাত্তর ভাগ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসাবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না।’

তবে ডিএনসিসি'র উপনির্বাচন নিয়ে দায়ের করা রিটের আদেশ হলেও ডিএসসিসি’র ভাগ্যে কী থাকছে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ডিএসসিসি’র নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের প্রথম দিনের শুনানি আগামী রবিবার (২১ জানুয়ারি) পর্যন্ত মুলতবি করেন হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে পুনরায় শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এ মামলায় রিটকারীদের পক্ষে আছেন আইনজীবী মামুন কবীর।

আরও পড়ুন- ডিএনসিসি উপনির্বাচন: আশঙ্কাই সত্য হলো