শেষ শিশুপ্রহরও জমেছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে

শিশুপ্রহরের শেষ দিনে সিসিমপুরের ইকরি টুকটুকিদের দেখতে শিশুদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়

অমর একুশের গ্রন্থমেলায় শেষ শিশুপ্রহর ছিল আজ শনিবার। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবারের সকালটা শিশুদের জন্য বরাদ্দ করেছিল বাংলা একাডেমি। আজ মেলার শেষ শিশুপ্রহরে অভিভাবকদের সঙ্গে এসে  সে আয়োজন উপভোগ করে উচ্ছ্বসিত ছিল শিশুরা। স্টলের পর স্টলে শিশুদের উপযোগী নানা ধরনের বই—মা-বাবা-স্বজনদের সঙ্গে এসে সেখান থেকে মনের মতো বই বাছাই করা; তার সঙ্গে মেলার শিশুচত্বরে সিসিমপুরের  হালুম, ইকরি, শিকুসহ সব চরিত্রের সঙ্গে দাপাদাপি—বইমেলার এমন আনন্দের তুলনাই হয় না। আর শেষ শিশুপ্রহর বলে আজ সকালে মেলায় ভিড়ও ছিল অনেক বেশি। আগের শিশুপ্রহরে  ঘুরে গিয়ে সেসব শিশু বইয়ের ফর্দ বানিয়েছিল, বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা তো ছিলই, এছাড়াও  যাবো যাচ্ছি করেও সময় মেলাতে পারছিলেন না যেসব অভিভাবক—সন্তানদের তাড়া খেয়ে আজ তারাও সপরিবারে উপস্থিত মেলায়।

শিশুপ্রহরে টুকটুকি, হালুম, শিকু আর ইকরিদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করে শিশুরা

আজ মেলার শিশু চত্বরের সিসিমপুর এলাকায় বড়দের পা রাখারও জায়গা ছিল না। শিশুরা সব ঘিরে রেখেছে হালুম, টুকটুকি, ইকরি, শিকুদের। এদের সঙ্গে কথা বলছে তারা, ছবি তুলছে, শুনছে বিভিন্ন উপদেশ। হালুম তাদের বলেছে বেশি বেশি মাছ খেতে ; টুকটুকি বলেছে বই পড়তে; ইকরি বলেছে বড়দেরকে প্রশ্ন করতে আর শিকু বলেছে নতুন নতুন আবিষ্কার করতে।

সিসিমপুরে আনন্দ করে হাঁপিয়ে ওঠা আট বছরের রিশা বলেন, ‘এবার বই কিনবো। খেলা শেষ। বই আমি আমার পছন্দের কিনবো। বাবা হেল্প করবে।’ রিশার বাবা রাশেদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সত্যিকার অর্থে ভিড় ঠেলে বইমেলাতে আসতাম না আগে। শিশুপ্রহরের কারণে এখানে আসা হয় বইমেলা চলাকালে সবক’টি শুক্র শনিবারেই। আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে শিশুরা বইয়ের জগতে প্রবেশ করতে শেখে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এগারো বছরের শিশু ফারাজ আহমেদ সুফিয়ানি বলে, ‘আমি এ বছর দুবার মেলায় এসেছি। শিশুপ্রহরে আজ টেলিভিশনে টুকটুকি হালুমকে সামনাসামনি দেখেছি ৷ হালুম আমাকে মাছ খেতে পরামর্শ দিয়েছে।’ সব শিশু বই পড়ার বয়সী হয়েছে এমনও না। কিন্তু শিশুপ্রহরে তাদের জন্য হালুম টুকটুকির উপস্থিতি তাদেরকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের একধরনের সামাজিক ওরিয়েন্টেশন হচ্ছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। বইমেলার পরিবেশটাই অন্যরকম ভাবতে শেখায়।

শিশুপ্রহরে বাবা-মায়ের সঙ্গে স্টলে স্টলে ঘুরে বই বাছাই করছে শিশুরা

শিশুদের বই বিষয়ে অভিভাবক সায়মা রহমান বলেন, শিশুদের জন্য অনেক আয়োজন। ভালো বই, অপ্রয়োজনীয় বই সবই আছে। কিন্তু বইয়ের দাম একটু বেশি। কিন্তু যখন বই উল্টে উল্টে শিশুরা দেখে কোনটা সে নেবে, কোনটা তার ভালো লাগছে তখন আর দামের বিষয়গুলো অতটা ভাবায় না। বই পড়ার কোন বিকল্প নেই সেটি পরবর্তী প্রজন্ম এভাবেই শিখবে।

আট বছরের শিশু আহনাফ সামিনকে কিছু একটা বুঝিয়ে বলছিলেন তার মা। সামিনের মন খারাপ কেন জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমি হলুদ-নীল রঙের হালুম, টুকটুকি দেখেছি। এক বছর তাদের দেখা পাবো না। সেজন্য মন খারাপ।’

কী বই কিনলে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আজ বই কিনিনি। কয়েকদিন  আগে যখন এসেছিলাম, মা আমাকে বই কিনে দিয়েছে। একবছরে সব কয়টা পড়ে ফেলবো।’

আরেক শিশু জুনাইরা তাজমিনের বাবা সাহেদ ইমামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বইমেলার পাশাপাশি শিশুদের জন্য এ ধরনের আয়োজন আসলে প্রশংসনীয়। শিশুরা এখানে (শিশুপ্রহর) এসে হালুম-টুকটুকির সঙ্গে কথা বলে মজা পাচ্ছে। ভালো ভালো উপদেশও পেয়েছে।  দেখা গেছে অনেক শিশু তাঁদের বাবা- মায়ের কথা শুনতে চায় না।  কিন্তু হালুম, টুকটুকির কথা তারা শুনবে। কিন্তু শিশুদের তুলনায় শিশুচত্বরের মূল যে স্টেজ তা অনেক ছোট।  ফলে শিশুদের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে উপভোগ করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ।’

টুকটুকিদের দেখতে শিশুদের ভিড়। অনেকে শুধু এই লোভে দ্বিতীয়বার এসেছে মেলায়।

অভিযোগের বিষয়ে শিশুপ্রহরের স্টল ম্যানেজার আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিভাবকদের অভিযোগগুলো আমরা জানতে পেরেছি এবং এসব অসুবিধার কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী বছর থেকে সব সমস্যার সমাধান করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার শিশুপ্রহরে অনেক শিশু এসেছে। তাদের আগ্রহের জন্য আমরা শিশুপ্রহরের আয়োজন করছি ৷ আশা করি এইবারও তাদের কাছে ভালো লেগেছে ৷’