জেনেভা ক্যাম্পে র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযান, আটক শতাধিক

জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী অভিযানে আটককৃতরারাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা বিহারি ক্যাম্পে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অভিযান চলে। এসময় বিহারি ক্যাম্প এবং আশেপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের শতাধিক নারী-পুরুষ ও তরুণকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের পর জেনেভা ক্যাম্প প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে।

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শনিবার বিহারি ক্যাম্পে এ অভিযান চালালো র‍্যাব। ক্যাম্পে প্রবেশের প্রধান ৬টি পথ রয়েছে। এছাড়া আরও ছোট ছোট অনেক পথ আছে। এগুলো সব বন্ধ করে র‍্যাবের ৩৬টি টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে অভিযান চালানো হয়। আটককৃতদের র‌্যাব-২ এর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জেনেভা ক্যাম্পে র‍্যাবের অভিযানঅভিযান শেষে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন,  ‘যাচাই-বাছাই করার পর যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আটক রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা আজকের নয়, অনেক পুরনো। ঘনবসতির কারণে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা কঠিন। আমরা সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একাধিক টিম নিয়ে অভিযান চালিয়েছে।’

33599892_10214183093749647_6483215638247505920_nতিনি আরও বলেন, ‘এর আগে কখনও ক্যাম্পে এমন অভিযান চালানো হয়নি। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো না। এজন্য সর্বোচ্চ প্রিপারেশন ছিল আজকের অভিযানে। তবে কোথাও কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।’

তবে আটককৃতদের অনেকের পরিবার ও স্বজনরা জানেন না কেন তাদের আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আটককৃত কয়েকজনের স্বজনের সঙ্গে।

আটক একজনের পরিচয়পত্র

আটককৃতদের একজন সাউথ ইস্ট ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থী ফাহমিদা। বাসা জেনেভা ক্যাম্পের সি ব্লকে। মা বানু বলেন, ‘সকালে বাসার সবাই ঘুমে ছিল। তখন আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে র‍্যাব।’

অভিযানে ছিল ডগ স্কোয়াডধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুল হাওলাদার নয়ন (২৩)। তার ভাবি সুলতানা টগর বলেন, ‘ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিল নয়ন। সেখান থেকে সকাল ১১টার দিকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।’

আটক একজনের পরিচয়পত্র

গাড়ি চালক বাদলের মা নাসিমা বেগম বলেন, সকাল ১১টার দিকে তার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় র‍্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

আটকৃকতরাসেলুন কর্মী রাজার (২৮) মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘বিহারি ক্যাম্পে বাসা থেকে বেলা ১১টার দিকে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।’

কারচুপির ব্যবসায়ী পারভেজের (৩৫) স্ত্রী শবনম বলেন, ‘বিহারি ক্যাম্পের বাসা থেকে সকালে বাইরে বের হয়েছিল আমার স্বামী। এসময় তাকে ধরে নিয়ে গেছে।’

আটককৃতরাবাসা থেকে র‍্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে আরেক সেলুন কর্মী নওশাদ (২০) কে।

সেলুন কর্মী আলী হোসেনের মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সকালে ঘুমে ছিল। র‍্যাব অভিযান চালিয়ে আটক করে নিয়ে গেছে।’

অভিযানে ছিল ডগ স্কোয়াড

সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান আঞ্জু (২৪)কে হুমায়ন রোডের বাসার বাইরে থেকে ধরে নিয়ে গেছে র‍্যাব। তার স্ত্রী রূপা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‍্যাব সদস্যরা তাকে আটক করেন। নাশতা আনার সময় তাকে আটক করা হয়।’  

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘ভোররাত থেকে বিহারি ক্যাম্পে ৩৬টি টিম কাজ করেছে। বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, তরুণকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  বিকাল নাগাদ যাচাই-বাছাই শেষ হলে বলতে পারবো কতজনকে আটক করা হয়েছে।’  

ছবি: নাসিরুল ইসলাম।