কোরবানির পশুর ফেরিওয়ালা





১১১১

রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বসেছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। মূলত এসব হাটে ছাগলই বেচা হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ছাগল এনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কসহ পাড়া-মহলায় বেচছেন। কেউ কেউ ফেরিওয়ালার মতো বাড়ি বাড়ি গিয়েও ক্রেতা খুঁজছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, খিলগাঁও, বনশ্রী, রামপুর, আজিমপুর, পান্থপথসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কোববানি উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা এসব ছাগল সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ কিনে এনেছেন গ্রামের পশুর হাট থেকে। তারা প্রতি বছরই কোরবানির সময় এভাবে ছাগল এনে ঢাকায় বেচেন।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের সময় ছাগলের হাট বসা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মালিবাগ, বাসাবো, পল্লবী, শ্যামলী, পান্থপথ, দোলাইরপাড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়কের ফুটপাতে প্রতি কোরবানির ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ছাগলের হাট বসে।
২২২২

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাগল ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই রাস্তার পাশে বেচাবিক্রি করলেও তাদের একটি অংশ বাড়ি বাড়ি গিয়েও ছাগল বেচেন। এমনই একজন ব্যবসায়ী ময়মনসিংহের উজ্জ্বল মিয়া। তাকে গত দুই দিন ধরে খিলগাঁওয়ের সি ও বি ব্লক এলাকায় ফেলিওয়ালার মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাগল বেচতে দেখা গেছে।
উজ্জ্বল জানান, তিনিসহ চারজন ময়মনসিংহের চরাঞ্চল থেকে ১১০টি ছাগল নিয়ে গত রবিবার (১৯ আগস্ট) ঢাকায় এসেছেন। এসব ছাগলের কিছু তারা মালিবাগ বাজার এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেচছেন। বাকিগুলো মালিবাগ-খিলগাঁও এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেচছেন।
উজ্জ্বল জানান, প্রতি বছরই তিনি কোরবানির সময় এই এলাকায় ছাগল এনে বেচেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভালো দামে বেচতে পারলে আর পাড়া-মহল্লায় যাওয়া লাগে না। না হলে ফেরিওয়ালার মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেচেন।
উজ্জ্বলের কাছ থেকে নয় হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনেছেন খিলগাঁও সি ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোরবানি দেওয়ার জন্য এবার ছাগল কেনার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু বাসার সামনে পেলাম আর দরদামে মিলে গেল তাই নিলাম।’ কোরবানির জন্য শাহজাহানপুর হাট থেকে তিনি গরু কিনেছেন বলেও জানান।
আজিমপুরের আমতলী এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাগল বেচতে দেখা গেল সিরাজগঞ্জের তাড়াশ এলাকার ব্যবসায়ী মহব্বত মিয়াকে। তিনি জানান, কোরবানি ছাড়াও অন্য সময় এই এলাকার কয়েকজন কসাইয়ের কাছে নিয়মিত ছাগল সরবরাহ করেন তিনি। কিন্তু কোরবানির সময় বাড়তি লাভের আশায় নিজেই এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাগল বেচেন। ঈদের আগের দিন বেচা-বিক্রি বেশি হয় বলে জানান এই ব্যবসায়ী। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে বেচা শেষ না হলেও আগামীকাল ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত তারা বেচার চেষ্টা করেন। ঈদের দিন ঈদগাহ মাঠ প্রাঙ্গণেও ছাগল বিক্রি হয় বলে মহব্বত জানান।
মুগদা এলাকার রাস্তার সামনের ফুটপাতে অবস্থানকারী এক ব্যবসায়ীর থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনেছেন বিল্লাল হোসেন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি জানান, ছেলের সামনে পিইসি পরীক্ষা থাকায় এবার কোরবানির ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাননি। ঢাকায় ঈদ করতে তিনি ছাগলটি কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের ছাগলের হাটে গিয়েছিলেন। সেখানে দরদামে সুবিধা না হওয়ায় কিনতে পারিনি। আজ বাসার কাছ থেকে কিনে নিলেন।’
৩৩৩৩

কেতাব আলীসহ আরও নয়জন ব্যবসায়ী কিশোরগঞ্জ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে শতাধিক ছাগল নিয়ে পান্থপথ এলাকায় এসেছেন। কেতাব আলী জানান, তিনি এলাকায় পশুর ব্যবসা করলেও অন্যদের দেখাদেখি এবার প্রথমবারের ঢাকা এসেছেন। তবে তারা দুইজনে মিলে ১১টি ছাগল এনেছেন। সকালেই তারা ঢাকা পৌঁছেছেন। দুপুর সাড়ে ৩টা নাগাদ চারটি বেচতে পেরেছেন। তবে কোনও লাভ হয়নি বলে জানান। তার চালান উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। কেতাব আলী জানান, তিনি যেহেতু ঢাকার পথঘাট ভালো চেনেন না, তাই পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা নেই তার। পান্থপথে বসেই বেচার চেষ্টা করবেন। আর বেচতে না পারলে বাকিগুলো নিয়ে এলাকায় ফিরে যাবেন।
একই ট্রাকে আসা অপর ব্যবসায়ী মো সোহেল জানান, তিনি এলাকা থেকে সংগ্রহ করে প্রতি বছরেই ঈদের সময় ঢাকায় ছাগল এনে বেচেন। এবার ৪০টি ছাগল এনেছেন। গতবার ভালো লাভ পেলেও এবার তা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
দাম কি গতবারের চেয়ে কম কিনা, জানতে চাইলে সোহেল বলেন, ‘এখানে দাম কম সেটা বলবো না, তবে এলাকায় দাম আগের বারের চেয়ে বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে এনেছি।’
শেরপুর থেকে ৪০টি ছাগল নিয়ে কুদরত আলী এসেছেন মালিবাগ মোড়ে। তিনি জানান, তিনি আজ (মঙ্গলবার) ভোরে এখানে এসেছেন। দুপুর পর্যন্ত ১২টি ছাগল বেচেছেন।