মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউনে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

১১১১১১এক একটি সড়ক থেকে আসছে একাধিক মিছিল, সঙ্গে মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান ও বাসে চড়ে সমর্থকদের মহড়া। সবার গন্তব্য ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের সামর্থ্য ও সমর্থন বোঝানোর জন্য শোডাউন করছেন নগরীতে। গত শুক্রবার (৯ নভেম্বর) থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে এই অবস্থা চলছে। রাস্তা দখল করে শোডাউনের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর কর্মজীবীরা। ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে কর্মমুখী নগরবাসীকে।

রবিবার (১১ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, কোনও ধরনের সিগন্যাল বা নিয়মের তোয়াক্কা না করে এসব শোডাউন করছে সরকার দলীয় সমর্থকরা। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে মিছিল করছেন তারা। প্রতিটি মিছিলের সঙ্গে রয়েছে মোটরসাইকেলের বহর। আর এসব বহরেও মানা হচ্ছে না ট্রাফিক আইন। অধিকাংশের মাথায় হেলমেট নেই। একটি মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চড়ার নিয়ম না থাকলেও তিনজন করে দেখা গেছে অনেক বাইকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, তেজগাঁও ও বিজয় সরণি এলাকার বাসিন্দারা। এসব এলাকায় থমকে আছে যান চলাচল। এর প্রভাব পড়ছে পুরো মেট্রোপলিটন এলাকায়।

তবে ভোগান্তি কমাতে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশকে। এদিকে সাধারণ জনগণকেও বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

সাত মসজিদ সড়কের ২৭ নম্বর মোড়ে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। কোনও গাড়ি সামনের দিকে এগুতে পারছে না। রিকশাচালক রহিস মিয়া বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধইরা বইসা আছি। গাড়ি সামনে যায় না। যাত্রী নাইমা গেছে। আমি ঘুরে অন্য কোথাও যেতে পারতেছি না।’

৩৩৩রিকশা ছেড়ে পায়ে হেঁটে রওনা দিতে দেখা গেছে কর্মব্যস্ত মানুষদের। সাইন্স ল্যাবে কথা হয় বোরহান উদ্দিন নামে একজনের সঙ্গে। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাবেন তিনি। অন্যান্য দিন বাসে চড়ে কর্মস্থলে পৌঁছালেও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার বাসা থেকে রওনা দিয়েছেন দুই ঘণ্টা আগে। যানজটের কারণে হেঁটে যাচ্ছেন মতিঝিলের দিকে।

এ ব্যাপারে বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে যানজট দেখে আজকে একটু আগেই বাসা থেকে বের হয়েছি। হেঁটে যাচ্ছি অফিসে। গাড়ি চলে না, কী আর করার! সব সমস্যা তো আমার মতো সাধারণ মানুষের। রাজনীতি করে তারা, সুবিধাও পায় তারা। আর অসুবিধার ভাগীদার আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের যে সমস্যা হচ্ছে এটা তারা মনেই করছে না। মনে করলে এত মানুষকে কষ্ট দিতে পারতো না।’

এদিকে নির্বাচনি শোডাউনে অংশ নেওয়া জামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে তো ঈদের আনন্দ। একটু সমস্যা হয়, কিন্তু এটা জনগণ মেনে নিয়েছে।’

তবে হাজারো মানুষের মিছিলকে ট্রাফিক আইন মানানো খুব কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন ‍ডিএমপি দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল করে, মোটরসাইকেলে শোডাউন করে ধানমন্ডিতে মনোনয়ন কিনতে আসছে। কাকে বাধা দেবো। এটার নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক নেতাদেরই করতে হবে। যারা এসব নেতাকর্মী নিয়ে আসছেন, তারা যদি সচেতন হন, তাহলে দুর্ভোগ ও যানজট কমানো সম্ভব। আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

ডিএমপি রমনা ট্রাফিক জোনের এডিসি মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দুদিন ধরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আমরা এরপরও কয়েকটি স্থানে ডাইভারশন দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ধানমন্ডি ও এই সংলগ্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। চারদিক থেকে নেতাকর্মীরা আসছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা বলতে পারি। অনুরোধ করতে পারি। কিন্তু তারা যদি না মানেন, তাহলে আমাদের কঠোর অবস্থানে যেতে হয়। আবার কঠোর অবস্থানে গেলে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যাবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যানজট যতটুকু সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। যেসব নেতা মনোনয়ন ফরম কিনতে আসছেন, এ ব্যাপারে তাদেরও সহায়তা প্রয়োজন।’