অন্ধকার পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীসব ধরনের ঝড়-ঝঞ্ঝা পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বুধবার (২১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকারের বর্তমান মেয়াদের কর্মকাণ্ড জনগণের ওপর বিচারের ভার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। যদি নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয় আবারও তাদের সেবায় ফিরে আসবো। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো। আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই, এ দেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ। যতই অন্ধকার হোক-তা পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আর জনগণ যদি ভোট না দেয়, ক্ষমতায় যদি ফিরতে না পারি, তাও আফসোস নেই, কারণ দেশের উন্নয়নের ভিত রচনা করে দিতে পেরেছি।’

সেনাকুঞ্জে তার আজকের বক্তব্য ছিলো বেশ আবেগপূর্ণ, সাহিত্যের সংমিশ্রনে ভরা। বিখ্যাত কবি রবার্ট ফ্রস্টের একটি কবিতার লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক অ্যান্ড ডিপ, বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ অ্যান্ড মাইলস টু গো, বিফোর আই স্লিপ...অ্যান্ড মাইলস টু গো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, শত অন্ধকার, অমানিশা ভেদ করে এগিয়ে যাবে। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে।’

এ সময় তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ থেকে আবৃত্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাবো তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ তিনি বলেন, ‘আগামীর শিশুর জন্য এ দেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ একটি বাসযোগ্য দেশ।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার ডাকে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো বাংলার মানুষ। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে আমাদের সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পঁচাত্তরের কালো রাত না এলে বহু আগেই এদেশ বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে জায়গা করে নিতো।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দেশে কোনও উন্নয়ন হয়নি। একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন নানা উদ্যোগ নিই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান-সংস্থাকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে কাজ করি। সশস্ত্র বাহিনী শক্তিশালী করতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠাসহ সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি।’

প্রধানমন্ত্রী এদেশে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘ওদের আশ্রয় দেওয়া মানবিক কর্তব্য ও দায়িত্ব। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি। তাদের (রোহিঙ্গা) খাদ্য, বাসস্থান থেকে শুরু করে সব কিছুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, নৌবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী কাজ করেছে। অন্যান্য সংস্থাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছি।’

পুনরায় সরকারে ফেরার আশাবাদেও এদিন ছিলো প্রধানমন্ত্রীর কাব্যিক উদাহারণ। জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়’ লাইন উদ্ধৃত করে জনগণকে তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।