নির্মাণ হচ্ছে সলিড ওয়েস্টের প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র

সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (ছবি: সংগৃহীত)পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দেশের জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে সলিড ওয়েস্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ সলিড ওয়েস্টের মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজে হাতে দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কেরাণীগঞ্জে ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের সলিড ওয়েস্ট পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইয়ামাতো টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে কেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, তারা প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বাবিউবো) অনুরোধ করেছে।

পাশাপাশি যে এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে সেখানকার বিদ্যুৎ বাঘৈর উপকেন্দ্রের ১১ কেভি সঞ্চালন লাইন দিয়ে সরবরাহ করা হবে। এ কারণে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মতামতও চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মতামত দেওয়ার জন্য জোর দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, এ ধরনের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশি। তবে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার বিষয়টি সম্পৃক্ত করলে বিদ্যুৎ উৎপাদন লাভজনক হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এ ধরনের বিদ্যুতের উৎপাদনে কোনও দেশ খরচ বিবেচনায় নেয় না। শুধুমাত্র বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করা হয়।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সলিড ওয়েস্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। আমাদের দেশেও গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস হচ্ছে। এই গ্যাস রান্না এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। কিন্তু বিপুল পরিমাণ মানব বর্জ্য নিয়ে এখনও কোনও চিন্তা শুরু হয়নি। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর বেশিরভাগ মানব বর্জ্যই সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এতে ভয়ঙ্করভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাইছি এই ক্ষতি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস'র ঢাকার বর্জ্য নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হচ্ছে ভয়ঙ্কর মিথেন গ্যাসের ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাসহ বড় শহরগুলো। ওই গবেষণায় বলা হয়, দিনে দিনে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ব্যাপক পরিমাণে অর্গানিক (সবজি বা অন্যান্য পচনযোগ্য বর্জ্য) বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে।

এক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ঝুঁকি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতির শিকার বেশি হচ্ছে। এই মিথেন গ্যাস দিয়েই হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

এর আগে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই উদ্যোগ এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ কেরানীগঞ্জ শহরের বর্জ্য দিয়ে এ বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন বর্জ্য দিতে রাজি হওয়াতে সেখানে একটি ৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্র করার কথা হয়েছে। অন্যদিকে কেরানীগঞ্জেও কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা জরিপ চলছে। তবে বড় দুই শহরের তিন সিটি করপোরেশন এখনও কেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে আসেনি।