বিদেশে নিরাপত্তা নিতে পয়সা লাগে

ক্রাইস্টচার্চ ছেড়ে আসার সময় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ দলকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়


বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। ক্রমাগত বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে। প্রতিদিনই এক বা একাধিক সরকারি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন কারণে বিদেশ সফর করছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশই তাদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করে থাকে। ওই দেশের সরকারই সার্বিক নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান করে থাকে। এখন নতুন করে নিরাপত্তা কড়াকড়িতে যোগ হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দলের বিষয়টি। কিন্তু এরা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি দল বিদেশ সফরকালে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে দেখা হয়? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বিদেশে অন্যদের জন্য নিরাপত্তা চেয়ে নিতে পয়সা লাগে। সবকিছুর পরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলে আসলে কিছু হয় না।
সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ড সফরকালে অল্পের জন্য সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলায় ৫০ নিহত হয়েছেন এবং এরমধ্যে চারজন বাংলাদেশি আছে। ওই দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিদেশে পাঠানো হবে, তার আগে নয়।

বিদেশে বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ছাড়া কোনও দেশই অন্য কাউকে নিজের পয়সায় সিকিউরিটি দেয় না। বাকিদের যদি আমি সিকিউরিটি চাই তবে টাকা দিয়ে নিতে হবে। আমাদের এত টাকা নেই বলে আমরা এ ধরনের সিকিউরিটি নেই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত তেমন কোনও অঘটন ঘটে না। ’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ একই মত পোষণ করে বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক কোনও বিবাদে কোনও পক্ষ না থাকার কারণে আমাদের টার্গেটেড ঝুঁকি কম। এ কারণে বাংলাদেশের বিশেষ কিছু সুবিধা আছে এবং আমাদের ঝুঁকি অনেক কম।’

কিছু কিছু দেশ বৈশ্বিক বিবাদে অবস্থান নেওয়ায় এবং তাদের অভ্যন্তরীণ গোলোযোগের কারণে বিদেশ ভ্রমণের সময় ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন, ভারত। কারণ, কাশ্মির বা পাকিস্তান বিষয়ে অবস্থানের কারণে তাদের ঝুঁকি বেশি। তবে মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ স্বীকার করেন, ‘টার্গেটেড ঝুঁকি কম থাকলেও যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেমনটা নিউ জিল্যান্ডে ঘটতে পারতো।’

রশিদ বলেন, ‘সাধারণভাবে নির্দিষ্ট আমন্ত্রণ বা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সরকারের প্রতিনিধিরা বিদেশ সফর করে থাকেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে যদি কোনও পূর্বালোচনা না হয়ে থাকে তবে ধারণা করে নেওয়া হয়, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ওই দেশ দেবে। এটা অনেকটা নিঃশব্দ চুক্তির (সাইলেন্ট এগ্রিমেন্ট) মতো। আমরা ধরেই নিই বিদেশ সফরকালে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এটি শুধু বিদেশ সফরের সময়ে প্রযোজ্য নয়। বিদেশে অবস্থানকালে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখভাল করে হোস্ট সরকার।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।’