ভূমি মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বে অগ্নিকাণ্ড!

 

এফ আর টাওয়ারে ভূমি মালিকের লাগানো সতর্কতামূলক নোটিশবনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের এফ আর টাওয়ারে আগে থেকেই নাশকতার শঙ্কা করেছিলেন ভূমি মালিক। এমন শঙ্কার কথাসহ ভবন নির্মাণের নানা ত্রুটি ও অবৈধ দখলদারদের তথ্য উল্লেখ করে ভবনটির নিচ তলায় একটি ‘জরুরি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ লাগিয়েছিলেন তিনি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ভূমি মালিকের বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ না করা হলেও ভবনটি নির্মাণের বিভিন্ন অনিয়মসহ ভবনের ভূমিদাতা ও ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। বিজ্ঞপ্তিতে বিশৃঙ্খলা, নাশকতা, ভবনের ক্ষতিসাধন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিটিতে ভবন নির্মাণে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সে বিষয়েও বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে সম্প্রতি পাঠানো চিঠি অনুযায়ী রাজউকের নির্মাণ সংক্রান্ত বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এফ আর টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এর ওপর অবৈধভাবে অধিক উচ্চতায় ভবন নির্মাণ করার ফলে রাজউক সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দেয়। অবিলম্বে অবৈধ উচ্চতা সংশ্লিষ্ট অংশটি অপসারণ করে ভবনটিকে বৈধ উচ্চতায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাজউকের নোটিশে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাজউকের নির্দেশনা মোতাবেক উল্লিখিত অবৈধ নির্মিত উচ্চতা অপসারণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আইনগত দখলদার এবং প্রকৃত ল্যান্ড ডোনারের অনুমতি ছাড়া ছাদে অবৈধ স্থাপনা (কথিত ব্যারাক) নির্মাণ করা হয়েছে।’এফ আর টাওয়ারে ভূমি মালিকের লাগানো সতর্কতামূলক নোটিশ

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রাজউকের চিঠির ব্যত্যয় ঘটিয়ে জনৈক তাসভীর উল ইসলাম (কাশেম ড্রাইসেলস-এর মালিক) এফ আর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩ তলাসহ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এজন্য তিনি একজন অবৈধ দখলদারও বটে।’

বিজ্ঞপ্তিতে রাজউকের নির্দেশনা অনুসারে ভবনের উচ্চতা সংশ্লিষ্ট অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজে যাতে কোনও ধরনের বিঘ্ন না ঘটে,  সে জন্য ছাদের অবৈধ স্থাপনাসহ (কথিত ব্যারাক) ভবনের ২১, ২২ ও ২৩ তলার অবৈধ দখলদার তাসভীর উল ইসলামকে তার সব আসবাবপত্র ও মালামাল আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

এতে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘উপরোল্লিখিত সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেকোনও পদক্ষেপ থেকে কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি বা কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে, অথবা অত্র ভবনের অন্য কোনও অংশের ক্ষতিসাধন বা কোনোরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধ্বংস করা হলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।’এফ আর টাওয়ারে আগুন

রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবনটি নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানি ও ভূমি মালিকের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ডেভেলপার কোম্পানি মালিকের কথা না মেনে অবৈধভাবে বাকি ফ্লোরগুলো নির্মাণ করে। এর মধ্যে কাশেম ড্রাইসেলস লিমিডেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসভীর উল ইসলাম কোম্পানির নামে ফ্লোরগুলো দখল করে রেখেছেন। একাধিকবার তাদের নোটিশ করেও কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজউকের পক্ষ থেকে ভবন সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বের করে আইনের আওতায় আনবো। প্রয়োজনে অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হবে।’এফ আর টাওয়ারে আগুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনটির ২১, ২২ ‍ও ২৩ তলা কাশেম ড্রাইসেলস নামে একটি কোম্পানি দখল করে রেখেছে। ওই তলাগুলোতে তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানিটি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন তাসভীর উল ইসলাম। এছাড়া, কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ড. রেয়ান আনিস ইসলাম, নাফিসা কাশেম, সামিদ কাশেম ও তারিক আবুল আলা। বারবার চেষ্টা করেও কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এমন বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ভবনে কর্মরত একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়। সেটা হচ্ছে, ভবনটি অবৈধ উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজউক কয়েক বছর ধরে তাদের অবৈধ অংশ অপসারণ করে বৈধ উচ্চতায় নিয়ে আসার নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। তবে রাজউকের নোটিশ উপেক্ষা করা সত্ত্বেও রাজউক তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই ভবনের জমির মালিক এবং ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে বিরোধ ছিল। মালিকের কথা না মেনে ২১, ২২ ও ২৩ তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করে অন্য কেউ দখল করে ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,  তাতে প্রশ্ন হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা পরিকল্পিত ঘটনা নয় তো?’

 

আরও পড়ুন- 
এফআর টাওয়ারের অনুমোদন দেওয়া রাজউক চেয়ারম্যানকে খুঁজছেন পূর্তমন্ত্রী

এফআর টাওয়ারে আগুন: ২৫টি লাশ উদ্ধার, ২৪টি হস্তান্তর

আগেও আগুন লেগেছিল এফ আর টাওয়ারে

রাজধানীর আট হাসপাতালে ভর্তি ৫৯

এফ আর টাওয়ারে নিহত যারা