এ বছরের চামড়া নগদে, বকেয়া পাওনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ২২ আগস্ট





প্রেস ব্রিফিংয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়নের সঙ্গে অন্যরা

ট্যানারি মালিকদের কাছে এ বছরের চামড়া নগদ মূল্যে বিক্রিতে রাজি হয়েছেন আড়তদাররা। ট্যানারি মালিকরাও নগদে চামড়া কিনতে রাজি হয়েছেন। তবে আড়তদারদের বাকেয়া টাকা ট্যানারি মালিকরা কবে পরিশোধ করবেন, সে বিষয়ে আগামী ২২ আগস্ট একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। রবিবার (১৮ আগস্ট) বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
এর আগে বকেয়া চারশ’ কোটি টাকা না পেলে চামড়া বিক্রি করবেন না—কোরবানি ঈদের পর থেকে এমন সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন আড়তদাররা। ফলে এ খাতে একটা স্থবিরতা তৈরি হয়। এই অবস্থায় ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের নিয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
ব্রাজিলে অবস্থান করায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ন,প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম, শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান, ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ মাহিন, সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এম সাইফুল ইসলাম, আড়তদার সমিতির সভাপতি দেলওয়ার হোসেন। এছাড়া আড়তদার সমিতির দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া,ফেনী ও বগুড়া জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে কোনও সাংবাদিককে রাখা হয়নি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আড়তদারদের বকেয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে সে বিষয়ে আগামী ২২ আগস্টের বৈঠকে জানানো হবে। এফবিসিসিআই’র মধ্যস্থতায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যেসব ট্যানারি মালিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বকেয়া ও ব্যাংক লোন পরিশোধ করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা প্লেস লোন নিয়ে ব্যাংককে না জানিয়ে চামড়া বিক্রি করেছেন, অথচ ব্যাংক লোন পরিশোধ করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেনুইন মালিকরা যারা টাকার অভাবে এ বছর চামড়া কিনতে পারছেন না, তাদের ব্যাংক লোন পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা করবে।


বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে বৈঠক

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, এ বছর আবহাওয়াজনিত কারণে ১০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর পশু কোরবানি হয়েছে এক কোটি। নষ্ট হয়েছে ১০ হাজার চামড়া। প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে এমনিতেই নষ্ট হয়।
চট্টগ্রামে দেখা গেছে ট্রাকে করে চামড়া ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে বিএনপির লোকেরা চামড়া কিনে ডাস্টবিনে ফেলেছে। চামড়া ফেলার আগে থেকেই মিডিয়াকে খবর দিয়ে তা রেকর্ড করে প্রচার করা হয়েছে।’
চামড়া রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কাঁচা চামড়া রফতানি একটি প্রসেসের বিষয়। চাইলেই তো আর চামড়া বিমানে তুলে দিতে পারি না। চামড়ার বাজার যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়টি এফবিসিসিআই দেখবে। প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় আড়তদার সমিতির সভাপতি দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে চামড়ার বাজার খুলে দেওয়া হলো। আমরা এখন থেকেই চামড়া বিক্রি করবো। দেনা পাওনার বিষয়ে ২২ তারিখে নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রতিনিধি জানিয়েছেন সেখানে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য প্রতিনিধিরা জানান, ট্যানারি মালিকরা নিজেরা নতুন নতুন গাড়ি কেনেন, ফ্ল্যাট বাড়ি কেনেন, বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন কিন্তু গরিব মানুষের পাওনা পরিশোধ করেন না। এদের বিচারর দাবি করেন তারা।

বাণিজ্য সচিব বলেন, যারা ইচ্ছা করে টাকা বাকি রেখেছেন তাদের বিচার হবে। চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা সরকারকে বিব্রত করেছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী তিন মাস যেন একটি চামড়াও নষ্ট না হয় আমরা সেই গ্যারান্টি চাই।

সিদ্দিকুর রহমান ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জানতে চান তাদের সদস্য কতজন। তারা জানান, ৮৯ জন। তখন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ’তে পাঁচ হাজার সদস্য। তাদের ম্যানেজ করে আমরা রফতানিতে ৮০ ভাগ অবদান রেখেছি। তথচ আপনারা মাত্র ৮৯ জনকে ম্যানেজ করতে পারেন না। আপনাদের অবদান মাত্র আড়াই শতাংশ। এটি হাস্যকর। আপনাদের সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। যারা কথা শোনেন না, তাদের বের করে দেন।