জানা গেছে, সম্প্রতি ডিএনসিসির যান্ত্রিক বিভাগের উদ্যোগে মোটরবাইকের পেছনের চাকার দুপাশে অতিরিক্ত দুটি লাগিয়ে ক্যারিয়ার সংযোজন করা হয়েছে। সেখানে থাকছে ফগার মেশিন। প্রতিটি বাইকে দুজন কর্মী। একজন বাইকটি চালান এবং অন্যজন ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ১০টি অঞ্চলের প্রতিটিতে একটি করে এ ধরনের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাইকের মাধ্যমে ঘণ্টায় প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকায় ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। দ্রুত চলার কারণে এসব মেশিনে ওষুধের ঘনত্বও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
গত ৩১ জুলাই এই মোটরসাইকেল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরপর এ ধরনের মোটরবাইক আরও তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র । ইতোমধ্যে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মোটরবাইক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে এজন্য।
এছাড়া, কয়েকটি পিকআপ ভ্যানে ফগার মেশিন সংযুক্ত করেও সড়কে ফগিং করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, মশক নিধনে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সম্প্রতি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে মোটরবাইক ও পিকআপ ভ্যানে মশক নিধনযন্ত্র স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এসব উদ্যোগ কাজের না। শুধু কীটনাশক বা ধোঁয়া দিয়ে ডেঙ্গু নিধন করা যাবে না। যেখানে ফগার মেশিনের শব্দ শুনলেই মশা পালিয়ে তিন থেকে চার তলা পর্যন্ত উঠে যায়, সেখানে ফগার মেশিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের শব্দও যুক্ত হচ্ছে। আবার সেটি জনগণের চলার রাস্তায়!’
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল কলকাতা পৌর সংস্থার সঙ্গে সম্প্রতি ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারাও মেয়রকে একই কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ কাজটা শুধু সরকারের তা নয়, এজন্য জনগণকে একটা বার্তা দিতে হবে। কাজের সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে।
মশার বংশ বিস্তারের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা বলছেন, ‘বাসাবাড়ির আঙিনা, ছাদ বাগান, নির্মাণাধীন ভবনের চৌবাচ্চা, পরিত্যক্ত ভবন, গাছের কোটর, এসি ও ফ্রিজ থেকে জমা পানি, ফুলের টব,পরিত্যক্ত টায়ার, খালি ক্যান ও ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি ঘটে। আর বাসাবাড়ি বা অফিস আদালতেই মশা বেশি থাকে। এসব স্থানে করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা যেতে পারেন না। এসব স্থানের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ফগিংয়ের প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এভাবে মশা নিধন করা যাবে না। ফগিংয়ের নমুনা পরীক্ষায় যদি ৮০ ভাগ মারা যায়, ফিল্ড টেস্টে সেটি ৪০ ভাগে নেমে আসে। আসলে মশা নিয়ন্ত্রণে ফগিং কার্যকর না। এজন্য লার্ভিসাইডিং বেশি করতে হবে, যাতে মশা উৎপাদন না হয়। তবে এখন যেহেতু মানুষের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে যে, সিটি করপোরেশন কোনও কাজ করে না। সে কারণেই তারা এসব করছে।’
নামপ্রকাশ না করার শর্তে মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানে করে ফগিং কাজে নিয়োজিত একাধিক মশক নিধনকর্মী জানান, এই দুটিই বাহনে করে ফগিং করতে গেলে মানুষ বিরক্ত হয়। হাসাহাসি করে। কারণ রাস্তা ছাড়া আর কোথাও ওষুধ দেওয়া যায় না। রাস্তায় তো মানুষ চলাচল করে। সেখানে তো মশা তেমন থাকে না। যেখানে মশা থাকে, সেখানে এ দুটি বাহনে করে ওষুধ দেওয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন হেঁটে হেঁটে মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটিয়ে আসছেন। একটা ভারী যন্ত্র কাঁধে নিয়ে মশার ওষুধ ছিটাতেও তাদের কষ্ট হয়। এজন্য অনেকে কাজেও গাফিলতি করতেন। কিন্তু মোটরবাইকে চড়ে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম শুরু করলে তাদের আগ্রহ বাড়বে। এতে সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে। মশক নিধন কার্যক্রমে সম্ভাব্য সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। কর্মীদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপনের কাজটিও প্রায় চূড়ান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফগিং কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবো। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে আমাদের এ অভিযান শুরু হবে। আমরা লার্ভা ধ্বংসেও কাজ করছি। তবে কাজে গতি আনার জন্য মোটরসাইকেলে ফগার মেশিন সংযুক্ত করেছি।’