জানা গেছে, ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ করপোরেশনে অনুষ্ঠিত ১৯টি সভার মধ্যে মাত্র ছয়টি বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম থেকে দশম, ১২তম থেকে ১৭তম পর্যন্ত মোট ১৩টি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া অনেকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৫ জুন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে চিঠি দিয়েছেন। এরপর ১ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আ ন ম ফয়জুল হক তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্ত করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তিনি আইন অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে তার প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই কাউন্সিলর সাঈদকে বরখাস্ত করা হতে পারে।
২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের পর ডিএসসিসিতে মোট ১৯টি সভা অনুষ্ঠিত হয়।উল্লিখিত কাউন্সিলররা তাতে একাধারে তিন থেকে আটটি পর্যন্ত বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন। কেউ কেউ ১৪-১৫টি সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের কয়েকজন দুই-একবার অনুমতি নিলেও বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন পূর্বানুমতিও ছাড়াই। এরইমধ্যে একাধারে করপোরেশন সভায় অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের একটি তালিকা করেছে ডিএসসিসি। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই তালিকাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
এদের মধ্যে ১০টি সভার বেশি অনুপস্থিত ছিলেন এমন কাউন্সিলর রয়েছেন ৯ জন। তারা হচ্ছেন- ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আশরাফুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তফা জামান (পপি), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তরিকুল ইসলাম সজীব, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ও সংরক্ষিত আসনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন (মণি)।
এছাড়া, বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে ২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর সদস্যরা, সিটি করপোরেশনের কমিশনাররা এবং পৌরসভার মেয়ররা বিদেশ ভ্রমণে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর অনুমোদন নেবেন।’ কিন্তু একাধিক কাউন্সিলররা বিদেশে গেলেও মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেননি।
বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘যদি কোনও কাউন্সিলর একাধারে করপোরেশনের তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে প্রথমে তাকে নোটিশ করতে হবে। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে হবে। মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ কারণে তাদের অপসারণও করা যাবে। কিন্তু কেন তা করছে না সেটি হতাশা জনক।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকার জন্য আমরা একজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে লিখেছিলাম। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকিদেরকে নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আর কেউ যাতে অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারেন সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় যদি অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের তালিকা চায় তাহলে আমরা দিয়ে দেবো।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাদেরকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে আমরা তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা শুধু কন্ট্রোলিং অথরিটি। উনারা যদি আমাদেরকে জানান আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সেখান থেকে আমাদেরকে জানানো হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:
দায়িত্ব ভুলে গেছেন ঢাকা দক্ষিণের ৯ কাউন্সিলর!
ক্যাসিনো মাদক ফুটপাত ও পরিবহন চাঁদাবাজিতে ১১ কাউন্সিলর