মানবপাচার রোধে জাতীয় অ্যাকশন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ

মানবপাচার রোধে জাতীয় অ্যাকশন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ না নিলে সামনের বছর ট্রাফিকিং ইন পারসন অবস্থানে বাংলাদেশের অবনমন হতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটি। এ সপ্তাহে ঢাকা সফরের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস একথা জানান।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্য ট্রাফিকিং ইন পারসন অবস্থান তৈরি করে এবং বাংলাদেশ এ বছর দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান করছে। মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ যে জাতীয় অ্যাকশন পরিকল্পনা নিয়েছে, সেটির দৃশ্যমান বাস্তবায়ন না হলে আমাদের অবস্থান তৃতীয় স্তরে নেমে যাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওয়েলস।’

সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় ওয়েলস জানতে চান অ্যাকশন প্ল্যান কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, কতজন মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়েছে বা তাদের বিরুদ্ধে কী  ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু,এগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন,‘মানবপাচার রোধে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আমরা আশা করছি, সামনের বছর আমাদের অবস্থান ভালো না হলেও অন্তত অপরিবর্তিত থাকবে।’

ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন

এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে পাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করলেও ওয়েলস এদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ অন্যান্য মূল্যবোধের বিষয়ে তাদের অস্বস্তির কথা জানিয়ে এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মানবাধিকার, আইনের শাসন,মত প্রকাশে স্বাধীনতা, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, শ্রম অধিকারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তির কথা সরকারের বিভিন্ন জনকে জানিয়েছেন এলিস ওয়েলস।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের জন্য একটি তহবিল আছে যুক্তরাষ্ট্রের এবং এ তহবিল বাংলাদেশ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু, এর জন্য মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন ওয়েলস।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কী করা হয়েছে এবং কী করা হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে আমাদের আরও সহায়তা করবে বলে তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে।’

রাশেদ চৌধুরীর মামলা

ওয়েলসের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি উত্থাপন করলে ওয়েলস তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়সহ অন্যান্য কাগজপত্র পাঠাতে বলেন। ওয়েলস জানান,এসব কাগজ পরীক্ষা করার পর এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান জানাবে।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই মামলার সব কাগজপত্র পাঠানার জন্য তৈরি আছে এবং আমরা শিগগিরই এগুলো পাঠিয়ে দেবো।’

এর পরের পদক্ষেপ কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় এবং আমরা সেখানে আগেও যোগাযোগ রেখেছি এবং পরেও রাখবো।’

যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মহিউদ্দিন আহমেদকে ফেরত পাঠিয়েছিল এবং আমরা আশা করি, রাশেদ চৌধুরীকেও ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য,বঙ্গবন্ধুর খুনি মহিউদ্দিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিল,কিন্তু সেটি দেশটির আদালতে প্রত্যাখ্যান করা হয়। পরে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।