বাংলাদেশ-কাতার সংলাপ: আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ‘রাজনৈতিক সফর’

বাংলাদেশ-কাতারমধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আরও জোরালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সেখানকার ছয়টি দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ কমিশনের সভা হয়েছে ঢাকায়। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কাতারের সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম ‘রাজনৈতিক সংলাপ’ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকদের সফরের বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

এ বিষয়ে কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত  আসুদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও  ভালো করার জন্য রাজনৈতিক সফর জরুরি। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সংলাপে সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দেবো।’

বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাজনৈতিক সফর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অভিবাসন, শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’

অভিবাসন

রাষ্ট্রদূত  আসুদ আহমেদ  বলেন, ‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে গত সপ্তাহে কর্মী পাঠানো সংক্রান্ত যৌথ কমিটির পঞ্চম সভা দোহাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও বিশেষায়িত বাংলাদেশিদের ওই দেশে কাজ করার সুযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

কাতারে ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের পর অদক্ষ শ্রমিকদের কাজের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়বে। তখন সেদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। কাতার এ বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।

উল্লেখ্য, কাতারে বর্তমানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। তাদের একটি অংশ ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত। ওই নির্মাণ কাজ আগামী বছর শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্দি বিনিময়

উভয় দেশের জেলে রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি চুক্তি করার বিষয়ে ঢাকার সংলাপে আলোচনা হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৪০ জন বাংলাদেশি কাতারের জেলে রয়েছে। তারা দেশে ফিরে এসে এখানে শাস্তির মেয়াদ শেষ করার বিষয়ে আগ্রহী। আমরা উভয় পক্ষ এ বিষয়ে একমত এবং এ নিয়ে চুক্তি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।’

বাংলাদেশিরা কোন অপরাধে কাতারের জেলে আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান সংক্রান্ত মামলায় জড়িত। এছাড়া, দুই-তিন জন আছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।’ তবে তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে আসার সুযোগ নেই। 

মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন

বাংলাদেশে নির্মিত হবে এমন মেগা প্রকল্পে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থায়ন করতে আগ্রহী কাতার। এ বিষয়ে কাতারে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে এবং কোন প্রকল্পে তারা অর্থায়ন করতে পারে, সেটি বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বিষয়ে তখন আমরা কাতারের সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করবো বলে তিনি জানান।

জাতিসংঘে নির্বাচন

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় কাতার। এজন্য তারা বাংলাদেশের সমর্থন প্রত্যাশী।’

ঢাকায় এবারের বৈঠকে এ নিয়েও আলোচনা হবে। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো বলে জানান এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, যেকোনও আন্তর্জাতিক নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে কাকে ভোট দেবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে বাংলাদেশ।

অন্যান্য বিষয়

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কাতারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলাদেশি কাজ করে। সেখানে একটি বাংলাদেশি স্কুল খোলার জন্য জমি চাইবো আমরা। এছাড়া, বাংলা ভাষায় প্রচারের জন্য একটি এফএম রেডিও খোলার অনুমতি নিয়েও কথা হবে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি যৌথ কমিশন গঠন করার বিষয় আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সমুদ্র পরিবহন, আকাশপথ পরিবহন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণা, ট্রান্সফার অব সেন্টেনসড পার্সন, সংস্কৃতিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি করছে বাংলাদেশ ও কাতার।এ চুক্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা হবে ওই বৈঠকে, এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।