বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনকালে তিনি একথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য আধুনিক, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে সরকার দেশের সড়কপথ, সেতু, রেলপথ, নৌ-পথ এবং আকাশপথের সমন্বয়ে সামগ্রিক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্ব দিয়েছে।’
আধুনিক সড়ক-মহাসড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানসম্মত সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ এবং জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত করতে গুচ্ছ-প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এছাড়া, দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়ক চার বা তার বেশি লেনে উন্নীতকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্টের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য উভয় পাশে পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ, রংপুর-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মংলা চ্যানেলের ওপর সেতু নির্মাণ, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি ২০১৫-৩৫) বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এর আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক (এমআরটি লাইন-৬) এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি-৩ নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আরও দুটো মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক (এমআরটি লাইন ১ ও ৫) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মূল নির্মাণকাজ আগামী অর্থবছরে শুরু হবে। এছাড়া, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই হাজার ৫৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক মার্কিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক হাজার ৯৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের আন্তবাঁকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধক স্থাপনা, যেমন- বৃক্ষ অপসারণ পরিকল্পনাধীন রেয়েছে। সড়ক নিরাপত্তায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে সেতু-টানেল নির্মাণ
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি সমন্বিত ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাওয়া ও জাজিরা সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২-এর নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মে ২০২০ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ; দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় চার দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণকাজের ৫১ দশমিক শূন্য শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’
এছাড়া ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা যায়। গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলার সংযোগকারী যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর ওপর, ভুলতা-আড়াইহাজার-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর, বরিশাল ভোলার সংযোগ স্থাপনে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর এবং বরগুনা পাথরঘাটা সড়কে বিশখালী নদীর ওপর পাঁচটি বৃহৎ সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে।