সরকারি কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ-ভ্রমণ সবই আপাতত বন্ধ হচ্ছে

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকরোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামাল দিতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও দেশ-বিদেশ ভ্রমণ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অহেতুক, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহারের নির্দেশনা রয়েছে। সরকারের এসব নির্দেশনা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট তৈরি হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে বাঁচানো। মানুষ বাঁচলে উন্নয়ন হবেই। তাই মানুষ বাঁচানোর স্বার্থে যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। ইতোমধ্যে সরকার ১০০ জন যুগ্ম সচিব ও ১০০ জন উপসচিব, মোট ২০০ কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকানো এবং করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন ব্যয় সামলাতে গিয়ে সরকার নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে। পাশাপাশি নতুন অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয় সংকোচনের মধ্যে রাখারও পরিকল্পনা চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের ব্যয় মোকাবিলায় সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে লাখ লাখ মানুষের আয় ও জীবন-জীবিকা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমেছে। অন্যদিকে করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এবং পরবর্তী তিন বছর সরকারের ব্যয় বাড়বে। মূলত এসবের কারণেই সরকার এ বছর থেকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এ ধরনের ১৮টি খাত চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারের বাজেটে এসব খাতের বরাদ্দ কমিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ব্যয় কমানোসহ যেসব নির্দেশনা দেবেন সেসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে প্রশিক্ষণসহ যেকোনও প্রোগ্রামে অংশ নিতে বিদেশে যেতে পারবেন না। এবারের বাজেটে এ খাতে ১০৮ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য ৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের সরকারি চাকরিজীবীদের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ খাতে ৭ কোটি টাকা ব্যয় কমছে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সারা বছর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর থেকে উন্নয়ন খাতের ব্যয় বাদ দিলে প্রকৃত আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়াও আগামী বছর মূলধনী অনুদান খাতে ৬৩ কোটি টাকা, পুরাকীর্তি, স্মৃতিসৌধ সংস্কার খাতে এক কোটি টাকা, উইপন সিস্টেম খাতে ২৯ কোটি টাকা, খুচরা যন্ত্রাংশ মজুত খাতে ৭ কোটি টাকা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের খাদ্যদ্রব্য খাতে ৮৮ কোটি টাকা, তালিকাভুক্ত ত্রাণসামগ্রী খাতে ৫ কোটি টাকা, মূল্যবান দ্রব্যাদি কেনাকাটায় ১৮ কোটি টাকা, অচাষকৃত জৈব পদার্থ খাতে ১ কোটি টাকা ও সরকারি চাকরিজীবীদের ঋণ খাতে ১০ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে আবর্তক চলতি বাজেটের চেয়ে ১ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবারের বাজেট তৈরি করেছে। করোনার প্রেক্ষাপটে তৈরি করা বাজেটটি অবশ্যই মানুষের জন্য।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন জানিয়েছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সমগ্র বিশ্বেই বর্তমানে ভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আমরাও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছি। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ট্যুর না করার নির্দেশনাও রয়েছে। তবে দেশে বা বিদেশে ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেখানে এই সুযোগ রয়েছে সেসব প্রশিক্ষণে আমাদের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ বা সেমিনার চলবে। কাজেই বিদেশ সফর বন্ধ থাকলেও আমাদের কর্মকর্তাদের দক্ষতা  উন্নয়নে কোনও সমস্যা হবে না।’