বঙ্গবন্ধুর খুনিকে দেশে ফেরত আনতে আইনি লড়াইয়ের পরামর্শ

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী (ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনার জন্য কূটনৈতিক প্রয়াসের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য এ সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ কূটনীতিক শিষ্টাচার মেনে আইনি সহায়তা নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এক খুনি এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করে বাংলাদেশে পাঠানো হয় এবং এই সংক্রান্ত মামলার রায় এখানে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। মহিউদ্দিন ও রাশেদ চৌধুরী একই অপরাধে দোষি এবং তাদের পরিণতির ক্ষেত্রে ভিন্নতা হওয়ার কথা নয়।’

মিজানুর রহমান বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের মামলার যুক্তিতর্কগুলি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেওয়া। কারণ মহিউদ্দিনের ক্ষেত্রে যেভাবে রায়টি দেওয়া হয়েছে, সেটি এখন রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিষয়টি আইনি, কিন্তু পররাষ্ট্র দফতর চাইলে তারা আইনজীবীদের একটি গ্রুপ তৈরি করতে পারে অথবা আইন মন্ত্রণালয়কে বলতে পারে এ বিষয়ে একটি ব্রিফ তৈরি করে দেওয়ার জন্য এবং কূটনৈতিকভাবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে।ড. মিজানুর রহমান

তিনি বলেন, ‘এখানে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এই চেষ্টা কাজ করবে কিনা জানি না। তবে আমরা বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবো, যতটুকু আছে ততটুকু নিয়ে চেষ্টা করা।’

একেএম মহিউদ্দিনকে ডিপোর্ট করা হলো অথচ একই অপরাধে দোষি রাশেদ চৌধুরীকে কেন রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হলো জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, দুটি রায় পড়ে এটি পরিষ্কার বোঝা যায় রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে কোনও প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু মহিউদ্দিনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভালো প্রস্তুতি ছিল।

নূর চৌধুরী মামলা

কানাডায় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি নূর চৌধুরীর মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোর্ট খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কানাডার ইমিগ্রেশন বোর্ড প্রথমে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন খারিজ করে দেয়। সেটাই চ্যালেঞ্জ করেছিল নূর চৌধুরী এবং পরবর্তীতে হেরে যায়।’

কানাডার ক্ষেত্রে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নূর চৌধুরীকে পাঠিয়ে দিলে এখানে কানাডার জন্য একটি রাজনৈতিক সমস্যা হতে পারে।’বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরী

এটি আইনি ইস্যু নয় বরং রাজনৈতিক বিষয় বলে মনে করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফেরত পাঠানো কানাডার জন্য অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়।’

তিনি বলেন, কানাডা যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে তবে তারা যেটি করতে পারে সেটি হচ্ছে আসামিকে তৃতীয় কোনও দেশে পাঠাতে পারে যেখানে মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কিত কোনও জটিলতা নেই। ওই তৃতীয় দেশ থেকে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব। তবে এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক নেগোসিয়েশন দরকার।

কানাডার সঙ্গে নূর চৌধুরীকে তৃতীয় কোনও দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দর কষাকষির পাশাপাশি আগেই ওই তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সমঝোতা থাকতে হবে বলে জানান মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, জার্মানির মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি এথলেটদের গুলি করার অপরাধী আবু দাউদকে প্যারিসে ধরা হলো এবং তখন তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করতে চায়নি ফ্রান্স।  ফ্রান্স বুঝতে পেরেছিল জার্মানি বা ইসরায়েল তাকে চাইতে পারে এবং কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ফ্রান্সের কোর্ট মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে এই বিষয়টি নিস্পত্তি করে বিচারক রায় দেন অবিলম্বে আবু দাউদকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে। তখনি তাকে আলজেরিয়ায় ডিপোর্ট করা হয়।

আরও পড়ুন- 

যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরীর পক্ষে দেওয়া রায় সংশোধনের সুযোগ এসেছে: ড. মিজানুর রহমান