সেমিনারে প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি, দখলদারদের তালিকা করেছি। সকল জেলায় এখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে গেছে। একটি জবাবদিহিতার জায়গা নদী রক্ষা কমিশন। সবার সহযোগিতা পেয়েছি। দেশের প্রচুর মানুষ নদী নিয়ে কাজ করছে। তাদেরকে সংগঠিত করাই কমিশনের কাজ। নদীর প্রবাহ বাধা দিলেই বিচার হবে, ১৮৯৮ সালেই আইন ছিল। আরও অনেক আইন আছে। কিন্তু আইনগুলোর ব্যবহার, প্রয়োগ প্রায় ভুলে গেছেন প্রয়োগকারীরা। আদালত এই কাজ সহজ করে দিয়েছে। সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসছে।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘নদীর আশেপাশে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। নদীর ক্ষতি হলে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। নদী বাঁচানো সংসদীয় কমিটির সদস্যদের এটি ফান্ডামেন্টাল জব। তাদেরকেই এই কাজ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘এখন দখল করার জায়গা হচ্ছে নদী আর পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেজন্য এই সংগ্রাম কঠিন। গত ২০ বছরে রাষ্ট্রের ন্যাচার পাল্টে গেছে। যে ক্ষমতায় আসে সেই সম্পদ বানাতে চায়। এটি নেতিবাচক হিসেবে না দেখে আমাদের চিন্তা করতে হবে এই সংগ্রামে আমরা একসঙ্গে আছি। এই আইনের কারণে সুপ্রিম কোর্ট নদী বাঁচাও আন্দোলনে এখন বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। জনগণের সমর্থন বাড়ছে। নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সামনে সুদিন আসছে।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা নদী রক্ষায় একটি রায় পাই আদালত থেকে। এরপরে বেশ কিছু রায় পাই কিন্তু মনে হলো নদী রক্ষায় রায় পেলেও নদীকে জীবন্ত সত্তা কোথাও বলা হয়নি। তাই আবার নতুন করে তুরাগের মামলা নিয়ে শুনানি হয়। আদালতের রায়ে আমরা এগিয়ে গেছি ঠিকই কিন্তু সামনে আরও বাধা আছে। যারা নদী দখল করে তারা খুব ক্ষমতাশালী। তাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আমাদেরও শক্তিশালী হতে হবে। এক্ষেত্রে একটি জোট গঠন খুবই ভাল উদ্যোগ।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক আইন আছে, নীতিমালা, বিধিমালা আছে। এসব আইন, নীতিগুলো সব থাকলে হবে না, বাস্তবায়ন তো হচ্ছে না। এই আইনের মাধ্যমে আদালত অবমাননা হচ্ছে বলেই নদী দখলের বিরুদ্ধে রিট করা যাবে। কিন্তু আইন সব না। এটি একটি অব্যাহত লড়াই। আমাদের পরিবেশ আদালতগুলো সক্রিয় করা দরকার।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল। অনুষ্ঠানে খোয়াই, তিস্তা, কলাপাড়া, বড়াল ও গাবুরা নদীসহ বেশ কিছু নদীর দূষণ বিষয়ে উপস্থাপনা দেখানো হয়। বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন, নারীপক্ষ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সেবা এর নির্বাহী পরিচালক সাঈদা রোখসানা খানসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য প্রতিনিধিরা, সারাদেশের নদীকর্মী, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সামাজিক আন্দোলনের নেতারা অংশ নেন।