জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি

জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবিতে মানববন্ধনকথিত অভ্যুত্থানের ‘অভিযোগে’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের ‘হত্যা’র জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। শুক্রবার (২ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সাতাত্তরের ষড়যন্ত্রের শিকার আমরা’ ব্যানারে ১৯৭৭ সালে অভ্যুত্থানের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ও তাদের স্বজনরা মানববন্ধন করেন।

ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নূরে আলম বলেন, ‘আজ ৪৩ বছর বাবা নিখোঁজ। বাবা যখন হারিয়ে যান, তখন আমার বয়স দেড় বছর। বাবার কোনও স্মৃতি মনে নেই। প্রতি বছর এই দিনে যখন চাচারা আমার পাশে এসে দাঁড়ান, তখন মনে হয় বাবার ঘ্রাণ পাচ্ছি। বাবার খোঁজে আমার মা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সেদিন কী ঘটেছে, আমরা জানতে চাই। তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বাবার চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। তা থেকে মুক্তি চাই।’

সাতাত্তরের ওই ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত ছিলেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের মরণোত্তর বিচার চাই।’

সাজাপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মোবাহের আলীর ছেলে কে এম তমাল বলেন, ‘ওই দিন যাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা নির্দোষ ছিলেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের কাছে একটাই দাবি, আমার বাবা ও তার সহকর্মীরা যে নির্দোষ ছিলেন, সেটি প্রমাণ করে দিন। বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। ওই ঘটনার বিচার হলে বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবিতে মানববন্ধন

২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর করপোরাল গাজী গোলাম মাওলা হিরু মানববন্ধনে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা; ওই দিন যারা সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা; ষড়যন্ত্রের শিকার সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ; ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি হয়েছে তাদের কবর চিহ্নিত করে কবরস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ; ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যাদের ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা; মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের পাকিস্তানি বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা এবং জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার।

মানববন্ধন আরও বক্তব্য রাখেন বিমান বাহিনীর সাবেক করপোরাল নুরুল ইসলাম, মুনির শরীফ, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান লেলিন, অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট আলী আহমেদে স্ত্রী রওশন আরা বেগম, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় প্রমুখ।