উপহারের টিকা পাবেন কারা

ভারত থেকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে আসবে বুধ অথবা বৃহস্পতিবার। দেশে টিকা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার আগে কিছু স্বেচ্ছাসেবক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর এই টিকা প্রয়োগ করে অন্তত সাত দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে ভারত থেকে উপহার হিসেবে আসন্ন ২০ লাখ ডোজ টিকার বিতরণ পরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত নয় বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি জানিয়েছেন, উপহারের ভ্যাকসিন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই দেওয়া হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর। ভ্যাকসিন বিতরণের পুরো পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে আজ মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, বুধ বা বৃহস্পতিবার টিকা আসবে। তিনি বিমানবন্দরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রয়োগ করে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে এটা শুরু হবে।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি জানান, ‘এসব টিকা সিএমএসডি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইপিআই এবং তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। সেই লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের তৈরি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ ২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।

১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। দেশে আনার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের ওয়্যারহাউজে রাখবে ভ্যাকসিন। এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে।ভ্যাকসিন

দেশে কত মানুষকে কোন পর্যায়ে কীভাবে ভ্যাকসিন দেবে সে বিষয়েও সাংবাদিকদের জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রথম দফায় টিকা দেওয়া হবে ৫০ লাখ মানুষকে।

কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস (এসএজিই)-এর নির্দেশনা এবং দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রথম মাসে সবচেয়ে বেশি টিকা বরাদ্দ থাকছে ৭৭ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৬২৬টি টিকা পাবেন তারা। এদের আবার দুই ভাগে করা হয়েছে। ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ টিকা, আর ৭৭ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে ১১ লাখ তিন হাজার ৬৫৩ টিকা। আবার স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর জন্য (যক্ষ্মা, এইডস রোগী, ক্যানসার রোগী) ছয় লাখ ২৫ হাজার টিকা রাখা হবে। এরাও প্রথম মাসে ভ্যাকসিন পাবেন। ৭৪ থেকে ৭৬ বছরের মধ্যে ব্যক্তিদের জন্য ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩টি টিকা থাকবে। প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় মাসে এই বয়সের সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় মাসে ৭০ থেকে ৭৩ বছরের জনগোষ্ঠীর ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জনকে টিকা দেওয়া হবে। ৬৭ থেকে ৬৯ বছরের ২৪ লাখ ৭৫ হাজার এবং ৬৪ থেকে ৬৬ বছরের ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হবে।