৪ মার্চ ১৯৭১: বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল যেদিন

অগ্নিঝরা মার্চের দিনটির ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালে বোঝা যায়, একাত্তরের মার্চের শুরু থেকেই এই বাংলায় সংগ্রাম এগিয়ে চলছিল দ্রুততার সঙ্গে। আন্দাজ করা যাচ্ছিল, বাঙালি জাতি কী ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল একটি মুক্তিযুদ্ধের। এইদিনে এসে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয়েছিল আরও একটু।

বিবৃতির মধ্য দিয়ে সকলকে প্রস্তুত হতে এবং বিভিন্ন কমিটি গঠন করতে ও মুক্তিবাহিনী প্রস্তুত করতে ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। আরেকদিকে এইদিনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের যার যার জায়গা থেকে করণীয় নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন।

ঘরে ঘরে প্রস্তুতির ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

দৈনিক বাংলা ১৯৭২ সালে মার্চ মাসজুড়ে আগের বছরের দিন স্মরণ করে ধারাবাহিক প্রকাশ করে। সেখানে আজকের দিন বিষয়ে লেখা হয়, ঢাকা ও সকল প্রদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালন হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার জমায়েত শপথের মধ্য দিয়ে বাংলার মুক্তি আন্দোলন ধাপে ধাপে এগোতে থাকে। ঘরে ঘরে প্রস্তুতির ডাক দেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু এদিন ডাক দিলেন, যে কোনও মূল্যে মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। প্রস্তুত থাকতে হবে ঘরে ঘরে। শোষণ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি নারী-পুরুষ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তা দেখে তিনি সবাইকে অভিনন্দন করেন। তিনি বলেন, আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তি আসবে না। কাজেই যে কোনও মূল্যে মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে যেতেই হবে।

সবশ্রেণির মানুষ এসেছে সংগ্রামে। এগিয়ে এসেছে শ্রমিক কৃষক, ছাত্র। রাজনীতিকদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। বেতার-টিভি শিল্পীরা এদিন থেকে বর্জন করেছে অনুষ্ঠান। সার্বিক মুক্তি আদায়ের গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে সাংবাদিক ইউনিয়ন। মিছিল ও সমাবেশের আয়োজনও করেছে তারা।

আন্দোলন শহর থেকে গ্রামে

মার্চের শুরুতে হাসপাতালে আহত সোনা মিয়া, আমিনুল, নজরুল ইসলাম, মাহবুব আলম মিয়া ও আরও অনেকে যন্ত্রণাকাতর মুখেও ঘোষণা করছে, সেরে উঠে আবার রুখে দাঁড়াবো (যদিও সোনা মিয়া কদিন পরেই শহীদ হয়েছিলেন)। হানাদাররা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল। এদিন চট্টগ্রামে তারা বেপরোয়াভাবে হত্যা করে একশ কুড়িজনকে। খুলনায় সাতজনকে। কিন্তু জনতা দমেনি। তারা আরও এগিয়েছে। ছাত্রলীগ ডাকসু নয়া কর্মসূচি দেয়। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আবেদন, ৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা শহরে এবং ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন শেষ করতে হবে। প্রতিটি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে ১ জন আহ্বায়ক ও ১০ জন সদস্য থাকবে।

এগিয়ে আসে অন্যান্য দল। শিক্ষকরাও সভা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রচণ্ড আন্দোলন এগিয়ে গিয়েছিল গ্রাম থেকে গ্রামে।

রুখে দাঁড়িয়েছিল সাংবাদিক ইউনিয়ন

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় ৪ মার্চের একটি সভা থেকে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ‘স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার না দিলে সাংবাদিকরা বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন না।’