‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের আগে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

কঠোর লকডাউনের আগের দিন সাধারণ মানুষের রাজধানী ঢাকা ছাড়তে হিড়িক পড়েছে। নগরীর প্রবেশপথগুলোয় উপছে পড়া ভিড় দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাইভেট কার, ট্রাক বা মিনি ট্রাকের করে তারা গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এতে ভাড়াও গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

পরিবহন সংশ্লিষ্ট বলছেন, দূর পাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও এরই মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকা ছাড়া এসব মানুষ বলছেন, ফুটপাত কিংবা রাস্তায় থাকা যায়, কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করা যায় না। এ কারণেই তারা রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি দিচ্ছেন।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নগরীর প্রবেশপথগুলোতে দেখা গেছে, ঘরমুখে মানুষের ভিড় অন্য দিনের চেয়ে বেশি। কোনও কোনও গণপরিবহন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে যাত্রী পরিববহন করছেন।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

সকালে সায়েদাবাদ রেলগেট থেকে জনপথ মোড় পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এসসময় নাদিয়া কান্তা রিদি নামে একটি পরিবহনকে যাত্রী উঠাতে দেখা গেছে। পরে পুলিশের উপস্থিতি দেখে তারা যাত্রী নামিয়ে দেন। তবে এসময় পরিবহন সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

একই চিত্র্ দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে মিনি ট্রাক যোগে নিন্ম ও নিন্মমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ যাত্রা দিচ্ছেন।

কথা হয় ইসমাইল আলী নামে একজন ফুটপাতের দোকানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় একটি চায়ের দোকান করে পরিবার চালাতাম। কাল থেকে সবকিছু বন্ধ। দোকান বন্ধ থাকলে তো পরিবার চলবে না। ঘর-বাড়ি না থাকলে রাস্তায় থাকা যায়। কিন্তু পেটে ক্ষুধা থাকলে থাকা যায় না। তাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।’ তবে তাদেরকে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

একই চিত্র গাবতলী থেকে সাভার সড়কে। সড়কটির আমিনবাজার ব্রিজ এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ কেউ মিনি ট্রাক, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল যোগে ঢাকা ছাড়ছেন। এছাড়া শ্যামলী থেকে কল্যাণপুর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন প্রকারের পরিবহনের কারণে তীব্র যানজট দেখা গেছে।

তবে মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের চিত্র ভিন্ন দেখা গেছে। এ দুই টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার কোনও বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। পরিবহনগুলো টার্মিনালে বসে আছে। তবে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকারগুলো বগুড়া, রংপুরসহ উত্তর বঙ্গে বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহন করছেন। জনপ্রতি ভাড়া আদায় করছেন ১৫০০-২০০০ টাকা।

ঢাকা ছাড়ার হিড়িক

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ পর্যন্ত শুধু দেশের সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে গণপরিবহন চলবে। দূর পাল্লার কোনও বাস চলবে না। আমাদের কোনও ‍দূর গণপরিবহন চলাচল করছে না। তবে অনেক যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাক, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা ছাড়ার খবর আমরা পাচ্ছি। সেটা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলে দিয়েছি কেউ যদি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরিবহন পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাওয়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ ফেরিঘাটগুলোতেও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড়ের খবর পাওয়া গেছে।