আধা লকডাউন কতটা কার্যকর?

বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সাত দিনের সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৩ দফা নির্দেশনাসহ এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু অঘোষিত এই লকডাউনে হাজারো মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ঘণ্টা মেপে খোলা রয়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, কাঁচাবাজার, শেয়ারবাজার, ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই লকডাউন কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণরোধে এই আধা লকডাউন কোনও কাজে আসবে না। ভাইরাস কোনও সময় বা ঘণ্টা মেপে কাজ করে না; বরং যে হারে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে তাতে করে এতদিনের উচ্চ ঝুঁকির ‘ঢাকা’র ঝুঁকি ছড়িয়ে গেলো দেশজুড়ে।

এদিকে, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি সংক্রমণ কমানোর জন্য পরিপূর্ণভাবে অন্তত দুই সপ্তাহের লকডাউনের সুপারিশ করেছিল।

নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার মনে করে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সভায় মতামত জানান কমিটির সদস্যরা। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

কমিটি আরও মতামত দেয়, দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে লকডাউন দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। যেকোনও দেশে সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সর্বনিম্ন তিন সপ্তাহের লকডাউন দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি ভালো একটা লকডাউন দেয়, তাহলে সংক্রমণের হার আরও কমে যেত।’

আধা লকডাউনে আধা ফল পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আধা লকডাউনে ফল পাওয়া যাবে অর্ধেক, পুরোটা নয়।’

এই আধা লকডাউনে আমাদের কিছু ক্ষতি হবে মন্তব্য করে অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাকি ৫০ ভাগ অর্জন আমাদের হবে না।’ তিনি বলেন, ‘গার্মেন্ট কারখানাতে লাখ লাখ শ্রমিক। তাদের মধ্যে সংক্রমণ হবে, এটা ঠেকানো যাবে না।’

‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি দিয়ে স্বাস্থ্যের সদ্য বিদায়ী সচিবসহ স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, আর সেখানে পোশাক কারখানায় কীভাবে চিন্তা করা যায় যে, গার্মেন্টেসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার সংক্রমণ রোধ করা যাবে? এটা বিশ্বাস করা যায়?’—যোগ করেন বে-নজির আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘তবে কিছু কিছু জেলায় হয়তো সংক্রমণ কমবে, কিন্তু কিছু কিছু জেলায় সংক্রমণ চলতেই থাকবে। আর এটা যদি চলতেই থাকে, তাহলে হয়তো এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পরে আবারও আগের ধারাতে সংক্রমণ চলে আসবে।’

সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে মানুষকে ঘরে বেঁধে ফেলার মতো ব্যবস্থা রাখতে হবে। কাঁচাবাজার, হোটেল খোলা রাখলে মানুষ ঘরে থাকবে না মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিধি-নিষেধ দিয়ে সংক্রমণের প্রবাহ রোধ করা যাবে না।’

‘এই আধা লকডাউন দিয়ে কিছু হবে না। এই বিধি-নিষেধ করোনাভাইরাসের প্রবাহকে ব্যাহত করবে না। করোনার প্রবাহকে থামাতে হলে লকডাউনের সঙ্গে রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন, রোগীর সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এবং খুবই সিনসিয়ারলি করতে হবে। নয় তো কিছু হবে না।’—বলেন অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না এগুলো দিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘লকডাউন মানে হচ্ছে কোনও এলাকাকে একেবারেই লক করে ফেলা। যেখানে বাইরের কেউ আসবে না, যেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। যাতে করে সে এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তার থেকে অন্য কেউ সংক্রমিত হতে না পারে। মানে হচ্ছে, মানুষের চলাচল সীমিত করে দিতে হবে।’

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁচাবাজার, হোটেল খোলা রেখে মানুষের চলাচল সীমিত করা যাবে না, তাতে করে ভাইরাসকে আটকে রাখা যাবে না। এই সংক্রমণের বিস্তার এই বিধি-নিষেধ দিয়ে রোধ করা যাবে না।’