ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি, দমকা হাওয়া

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াও বইছে। এটি আগামীকাল দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট , ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তার আশপাশের দ্বীপ ও চরগুলোতে দমকা হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুটে বেশির উচ্চতার জোয়ারের শঙ্কা আছে।

ইয়াস এখন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগুচ্ছে। ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভারতের উড়িষ্যার উপকূলের দিকে যাচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীকাল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। যার প্রবল প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের খেপুপাড়া, খুলনাসহ আশেপাশের এলাকায়।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত বিশেষ সতর্ক বার্তায় বলা হয়, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ -দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল, দুপুরে তা এগিয়ে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ -দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। একই ভাবে কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যায় ছিল ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ -দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন তা আছে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। মোংলা বন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছের সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় আছে। দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয় পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়,ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট,ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তার আশপাশের দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে উপরের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুটে বেশি উচ্চতার জোয়ারের শঙ্কা আছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সন্দ্বীপে ১৩০ মিলিমিটার। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৭০, নিকলিতে ৬৬, তাড়াশে ৬০, কুমিল্লায় ৫৭, ঈশ্বরদী ৪৭, রাঙামাটি ও নেত্রকোনায় ৪৬, চাঁদপুরে ৩৭, ঢাকায় ৩৬, মাইজদি কোর্টে ৩৫, সীতাকুণ্ডে ৩২, বদলগাছি ২৯, ময়মনসিংহে ২৭, যশোরে ২৩, কুমারখালি ও মাদারীপুরে ২২, ফরিদপুরে ২১,চট্টগ্রামে ১৭,দিনাজপুরে ১৬, সৈয়দপুর ও রাজশাহী ১৫,গোপালগঞ্জে ১৪, খুলনা ১২, বরিশাল ও শ্রীমঙ্গল ১১, ভোলায় ১০, ফেনী ৮, রাজারহাট, সাতক্ষীরা ৭, তেতুলিয়া ও টাঙ্গাইলে ৬, রংপুরে ৪,খেপুপাড়া ও টেকনাফ ৩, বগুড়া ও হাতিয়া ২, মোংলা, পটুয়াখালী, ডিমলা, সিলেট ও কক্সবাজার ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।