গ্রামীণ পর্যায়ে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কনস্যুলার সেবা: মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ এলাকা পর্যন্ত কনস্যুলার এবং প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দিয়েছে।

রবিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটি উইং আয়োজিত ‘পঞ্চম জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ কথা বলেন।

সরকারি সফরে তুরস্কে অবস্থান করায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সেবা এবং সেবার মান বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘দূতাবাস’ অ্যাপ চালু করেছে। ফলে ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।’’

তিনি বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন যোগাযোগের জন্য  ‘বৈঠক’ নামে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার শুরু করেছে।’ সরকার এরইমধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে এবং ভবিষ্যতে ই-ভিসা চালু করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’ প্রশাসনিক ও কনস্যুলার সেবাকে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে আরও সহজ করার জন্য মন্ত্রণালয়ের ৬২টি সেবাকে মাইগভ প্ল্যাটফরমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের মানুষ ঘরে বসেই যাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য এসব  সেবা জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান।’ এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সেবা সহজ করার লক্ষ্যে এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় বিদেশে সব বাংলাদেশি মিশনের জন্য একই ধরনের ওয়েবসাইট নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের অনুকরণে সফলভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লকচেইন, আইওটি-সহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো এবং ডিজিটাল যুগে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে সরকারের ফ্ল্যাগশিপ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গৃহীত উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতের জন্য ‘শেখ হাসিনা নিউরাল নেটওয়ার্ক’ তৈরিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও আইসিটি) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটিভিত্তিক ৭টি গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।

এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটুআই এর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বেসিসের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সংকল্পের কথা জানান।

উল্লেখ্য, সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ ইন ২০৪১:আ ড্রিম ইন মেকিং’ শীর্ষক একটি বৈশ্বিক অনুগল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ভাষায় শতাধিক অনুগল্প জমা হয়।

এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের নবীন কর্মকর্তাদের জন্য একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মাইগভ প্ল্যাটফর্মের অধীনে মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও প্রশাসনিক  সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের ব্যবহারের উন্মুক্ত করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আইসিটি) ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুনের সঞ্চালনায় হাইব্রিড ফরম্যাটে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।খবর: বাসস