শিল্পকলার মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে তদন্ত কেন শেষ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়?

২০২১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আর্থিক ও প্রশাসনিক আইনগত বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু কমিটিকে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে এই কমিটি কাজ শুরুই করতে পারেনি। এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে তদন্ত কমিটির একাধিকবার চিঠি চালাচালি হয়। সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ই-মেইলে কমিটিকে জানান, ১০ জানুয়ারির বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা নানা অনুষ্ঠান, সেমিনার ও সভার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে যাচিত নথি/রেকর্ডপত্র সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তার এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ ডিসেম্বর কমিটি তার কাজ সম্পন্ন না করতে পারার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) শওকত আলী ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।

উল্লেখ্য, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমসহ পাঁচটি ইস্যুতে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। তদন্তের জন্য একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির আর্থিক ও প্রশাসনিক আইনগত বিষয়ে তদন্তপূর্বক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সচিব বরাবর দাখিলের জন্য বলা হয়।

কমিটি-মহাপরিচালক চিঠি পাল্টা-চিঠি

কমিটি গঠনের পরে তদন্তকার্য পরিচালনার জন্য গত ১৭ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র প্রস্তুত রাখতে ১৪ নভেম্বর মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ১৫ নভেম্বর এক চিঠিতে জানায়, নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকায় সব নথিপত্র নিরীক্ষা দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিধায় তথ্যসমূহ প্রস্তুত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর বিপরীতে কমিটি ১৮ নভেম্বর দেওয়া চিঠিতে জানতে চায়, ঢাকার নিরীক্ষা কার্যক্রম কত তারিখে শেষ হবে। ওই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে পুনরায় মহাপরিচালককে চিঠি দেয় কমিটি। এ পর্যায়ে তদন্তের সময়সীমা বাড়িয়ে ২৬ ডিসেম্বর করা হয়। এবং কমিটি সেই তারিখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে মর্মে তদন্ত সংশ্লিষ্ট নথি/রেকর্ডপত্র প্রস্তুত রাখার জন্য ২৩ ডিসেম্বর পুনরায় মহাপরিচালককে চিঠি দেয়। সেই চিঠিরও জবাব মেলেনি। আবারও ২৯ ডিসেম্বর কমিটি তদন্তকার্য পরিচালনা করবে মর্মে ২৭ ডিসেম্বর মহাপরিচালককে চিঠি দেয়। কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্যরা সেদিন সরেজমিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে উপস্থিত হন। সে সময় মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং সচিব মো. আছাদুজ্জামানকে একাডেমিতে পাওয়া যায়নি বলে তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

 নথি/রেকর্ডপত্র বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মহাপরিচালক

একাধিকবার নথি চাওয়ার পরেও সেসব নথি সরবরাহ না করার বিষয়ে ই-মেইলে এক পত্রের মাধ্যমে তদন্ত কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দেন লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১১ ও ১২ জানুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান এবং ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত একাডেমির আয়োজনে টুঙ্গিপাড়ায় ‘মুজিববর্ষ লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ আয়োজিত হবে। এরমধ্যে প্রায় প্রতিদিনই এপিএ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অনুষ্ঠান, সেমিনার ও সভা আয়োজিত হচ্ছে। এছাড়া ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বশিল্পের অনন্য আয়োজন এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বাংলাদেশ-২০২২ শুরু হবে। এসব আয়োজন বাস্তবায়নে একাডেমির কর্মকর্তারা জড়িত। তারা ব্যস্ত থাকায় ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে যাচিত নথি/রেকর্ডপত্র সংস্থান করা সম্ভব নয়।