কৃষিতে ডাচ প্রযুক্তি চায় বেসরকারি খাত

চাষযোগ্য জমি কমে আসা, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পানির দুষ্প্রাপ্যতা বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অনগ্রসরতা ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও আছে অব্যবস্থাপনা। এসবই বাড়িয়ে দেয় পণ্যের দাম। ক্ষতি হয় ভোক্তার। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশের বেসরকারি খাত।

এ মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগে ৪০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও সম্ভাব্য উদ্যোক্তা ডাচ প্রযুক্তি সরবরাহকারী ও কৃষি খাতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ‘ম্যাচমেকিং’-এ বসবে। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আগামী ৩০ মে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস অ্যাগ্রি-বিজনেস কনক্লেভে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সরাসরি আলোচনায় বসবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘গত পাঁচ দশকে দেশের কৃষি খাতে যে নীরব অভ্যুত্থান হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে ও এগিয়ে নিতে নতুন প্রযুক্তির বিকল্প নেই।’

‘প্রযুক্তি কেউ এমনি এমনি দেবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরএনডি) খাতে কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ লাগে। সেই বিনিয়োগ তোলা ও নতুন বিনিয়োগের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি করা হয়।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডসে এক ধরনের টমেটো বীজ বিক্রি হয়, যার একটির মূল্য এক ডলার। ওই একটি গাছ থেকে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩০ কেজি টমেটো। এই প্রযুক্তি কিনতে হলে তো অর্থ ব্যয় করতেই হবে। আবার জর্ডানসহ অনেক দেশে সবজি উৎপাদনে ১০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এর বিপরীতে নেদারল্যান্ডসে প্রয়োজন হয় মাত্র ছয় লিটার।

‘শুধু উৎপাদন নয়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পেও বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। এদিক দিয়ে ডাচ প্রযুক্তি বিশ্বসেরা। এজন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে দুই দেশের বেসরকারি খাতকে এক জায়গায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, কৃষি খাতের উদ্যোক্তাসহ অন্য খাতের ব্যবসায়ীরাও আমাদের উদ্যোগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সম্ভাব্য উদ্যোক্তা হিসেবেও অনেকে কনক্লেভে অংশ নেবেন।

 

দুই দেশের মধ্যে মিল

বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সাদৃশ্য অনেক। দুটো দেশই ব-দ্বীপ ও আকারে ছোট। বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে ছোট হলেও নেদারল্যান্ডসের কৃষিতে সক্ষমতা অনেক বেশি। এছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নেও দেশটি বেশ বিনিয়োগ করে। সেই প্রযুক্তি তারা অন্য দেশে রফতানিও করে।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রকল্প বাস্তবায়নেও সহায়তা করছে নেদারল্যান্ডস। দেশটির সহায়তা নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের মিল আছে।’

 

অ্যাগ্রি বিজনেস কনক্লেভ

গত বছর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে নেদারল্যান্ডস সফর করেন। ওই সফরের সফলতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস অ্যাগ্রি বিজনেস কনক্লেভ আয়োজন করা হচ্ছে।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, এই কনক্লেভে কৃষি খাতের উদ্যোক্তা ও সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ব্যাংকার, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ডাটা অ্যানালিটিকস ও এনজিওগুলোও অংশ নিচ্ছে।

অর্থায়নের সাপেক্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।1653295176250blob

এছাড়া, কৃষি উৎপাদনে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডাটা অ্যানালাইসিসের ব্যবহারও বেড়েছে। ওই ধরনের কোম্পানিগুলোও এখানে অংশ নেবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

আর কারা অংশ নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় ব্র্যান্ডগুলোর প্রায় সবাই আছে। হালদা ভ্যালি টি এস্টেট, ইয়ন গ্রুপ, স্কয়ার, সিটি গ্রুপ, ইস্পাহানি অ্যাগ্রো, প্যারাগন গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, জেমকন গ্রুপসহ অন্যরাও আছে।

জানা গেছে, এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান এবং অনন্ত গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শরিফ জহিরও কনক্লেভে থাকবেন সম্ভাব্য উদ্যোক্তা হিসেবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, ডাচদের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছে ওয়েগিনার বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের কৃষি শিল্প সংশ্লিষ্ট সাতটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম ও দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, কৃষি নিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়মাপের গবেষণা হয়, তার মধ্যে অন্যতম নেদারল্যান্ডসের ওয়েগিনার বিশ্ববিদ্যালয়।