আব্দুর রউফ তালুকদার হতে পারেন নতুন গভর্নর

আগামী ৩ জুলাই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের। নতুন গভর্নর কে হচ্ছেন তা নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে দরকার হচ্ছে নতুন গভর্নরের। ফলে দক্ষ ও যোগ্য কাউকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই শীর্ষ পদে বসানো হচ্ছে। কয়েকজনের নাম নিয়ে ইতোমধ্যে পর্যালোচনাও শুরু হয়েছে।

যদিও ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রয়োজন নির্ভীক ও সাহসী নেতৃত্ব, যার মধ্যে দেশের আর্থিক, ব্যাংকিং ও প্রশাসনিক সব জায়গাতেই দক্ষ ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি রয়েছে।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রমতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন। করোনার সময় দেশের অর্থনীতির ক্রান্তিকালে তিনি অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার পরামর্শ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রশংসনীয় হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কারপ্রক্রিয়ায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাজেট সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অবসরভোগী সরকারি চাকুরেদের ইএফটির মাধ্যমে পেনশন প্রদান এবং সঞ্চয়পত্রের অটোমেশনে তার ভূমিকা ছিল অনেক। এছাড়াও পদাধিকার বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তিনি। ফলে পরবর্তী গভর্নর হিসেবে তার নাম আলোচনায় রয়েছে।

তবে কোনও কারণে আব্দুর রউফ তালুকদারকে গভর্নর করা সম্ভব না হলে অর্থবিভাগের সাবেক সচিব ও সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান অথবা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গভর্নর পদে দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সাহসী ও নির্ভীক হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলো অনুসরণে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংক খাতে সুশাসনে জোর দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এখন ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা চলছে, সুশাসনের অভাব রয়েছে। নিয়ম নীতিমালাগুলো পরিপালন হচ্ছে না। ফলে এটি নতুন নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে।

জানা গেছে, আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন অর্থসচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে দু’জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এই দু’জনই ১০ ব্যাচের কর্মকর্তা এবং দু’জনই অর্থ বিভাগে বিভিন্ন পদে ১৪ বছর ধরে কাজ করেছেন।

প্রসঙ্গত, বিসিএস ’৮৫ ব্যাচের আব্দুর রউফ তালুকদারকে ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর সিনিয়র সচিব হিসেবে পদমর্যাদা দেওয়া হয়।  তিনি ১৮ বছর অর্থ বিভাগে বিভিন্ন পদমর্যাদায় কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি শিল্প, খাদ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। এক সময় তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (কমার্শিয়াল) হিসেবে কাজ করেছেন। আব্দুর রউফ তালুকদার ২০২১ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান।

উল্লেখ্য, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করলে একই বছর ১৬ মার্চ ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর নিয়োগ দেয় সরকার। তবে গভর্নর হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগেই ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। এতে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। সেই হিসেবে ফজলে কবিরের ৬৫ বছর বয়স শেষ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। কিন্তু পরবর্তীতে অর্ডার সংশোধন করে গভর্নরের চাকরির মেয়াদ ৬৭ বছর পর্যন্ত করা হয়। সব মিলিয়ে তিন দফায় মোট ৬ বছর ৩ মাস গভর্নর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থাকছেন ফজলে কবির। তাকে এ পদে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার বিলও পাস করতে হয়েছে সংসদে।

যদিও ফজলে কবিরের সময়ে আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। বিশেষ করে পি কে হালদারের অর্থপাচারের বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচিত হয়। এই পি কে হালদার বিভিন্ন সময় পিপলস্ লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সসহ বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত ২২ মে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (পিএলএফএস) সংঘটিত ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের’ ঘটনায় ‘নীরব ভূমিকার’ অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেন সাধারণ আমানতকারীরা।