পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর সময় জানালেন সেতুমন্ত্রী

আগামী ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সর্বসাধারণের যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

রবিবার (১২ জুন) মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সাইট অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার অবদান পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এটি আমাদের স্বপ্নের সেতু, সামর্থ্যের সেতু, সক্ষমতার সেতু, মর্যাদার প্রতীক। যারা আমাদের অপমান করেছে, সেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সেতু।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ‌১০টায় মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ এবং ফলক উন্মোচন হবে। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেতু পার হবেন। সময় লাগবে ৬ মিনিট। ওখানে কাঁঠালবাড়িয়ায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি জনসভা করবেন। সেখানে জাতির উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেবেন।

কাদের বলেন, এই সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে পুরো শেখ পরিবারের ওপর দুর্নীতির কালিমা লেপনের চেষ্টা হয়েছে। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কারও নামই বাদ যায়নি। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন কর্মকর্তা পাকিস্তানের নাগরিক আমার রুমে বৈঠককালে শেখ হাসিনার ছবির দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন, দিজ লেডি ইজ মোস্ট করাপ্টেড। এ ধরনের অপমান আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। সেদিন আমাদের আশপাশে অনেকেই ছিলেন না। সেই সময়ে মন্ত্রী-সচিবদের গ্রেফতার করতেও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু নেত্রী ছিলেন অনড়।

তিনি আরও বলেন, এই সেতু শেখ হাসিনার অসীম সাহসিকতার ফসল। যারা বলছেন, সেতুতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তারা জানেন না আশপাশের দেশে যেসব সেতু নির্মিত হয়েছে বা যেসব সেতুর উদাহরণ তারা দেন, সেগুলোতে পদ্মা সেতুর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। তারা জানেন না এ ধরনের সেতু নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হতে পারে।

শেখ হাসিনার নামে এই সেতুর নামকরণ করতে জাতীয় সংসদসহ সারা দেশ থেকে দাবি উঠেছিল জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এই সেতুকে কেন্দ্র করে শেখ পরিবারকে জড়িয়ে নানা ধরনের সমালোচনা করা হয়েছে, সে কারণে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি পদ্মা সেতু নামটিই যথার্থ মনে করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা পঁয়ত্রিশ বছরে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সেটা টোল আদায়ের মাধ্যমে করা হবে। টোল বেশি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, টোল অতিরিক্ত হয়নি। সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। নিয়ম মেনেই টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, এই সেতুর অবদান দুই পাড়ের মানুষের। সেতু নির্মাণে তারা তাদের বাপ-দাদার ভিটামাটি উৎসর্গ করেছেন। এটি যদি তারা না করতেন, তাহলে আমাদের পক্ষে সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিল না। শেখ হাসিনা কখনও ইলেকশন নিয়ে ভাবেন না, তিনি জেনারেশন নিয়ে ভাবেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য (ডাঙার অংশসহ) ৯.৮৩ কিলোমিটার। জিডিপিতে এটি অবদান রাখবে ১.২৩ শতাংশ। পদ্মা সেতুর জন্য ২৭শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যয় হয়েছে ২৭০০ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী, অসীম কুমার উকিল, এসএম কামাল হোসেন, এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।