দক্ষিণের রুটে বাড়ছে বাস

পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। অঞ্চলটির বিভিন্ন রুটে বেড়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। নতুন করে বেশ কিছু কোম্পানির গাড়ি যুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংখ্যাটা পাঁচশ’র কম নয়। সামনে আরও গাড়ি নামবে বলেও জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের সবচয়ে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ঢাকা-বরিশাল রুটে। এই রুটে নতুন বাস বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। পিছিয়ে নেই ঢাকা-ঝালকাঠি, ঢাকা-ভান্ডারিয়া, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-কুয়াকাটা, ঢাকা-বরগুনা ও ঢাকা-পাথরঘাটা রুট।

ঢাকা-দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে আগে থেকে চলাচলকারী বিভিন্ন কোম্পানির পুরনো বাসগুলো ঈদুল আজহার আগেই মেরামত করা হয়েছে। ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর এসব গাড়ি যাত্রীসেবায় ফের যুক্ত হয়।

এ তালিকায় আছে— হানিফ, সাকুরা, ঈগল, সুগন্ধা, রাফিন-শাফিন, বেপারি, বরিশাল এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি কোম্পানি। বাদ যায়নি বিআরটিসিও।

দেশের অন্যান্য প্রান্তের আধুনিক বাসও দক্ষিণের রুটগুলোতে নামছে। তালিকায় আছে—ইলিশ, প্রচেষ্টা, এনা, মিজান, গ্রীন সেন্ট মার্টিন, সুপার সনি, ইউনিকসহ বেশ কিছু কোম্পানির বাস। আরও কয়েকটি কোম্পানির গাড়ি শিগগিরই তালিকায় নাম লেখানোর অপেক্ষায় আছে।

বরিশালের নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এখন প্রায় আধঘণ্টা পরপর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। ঢাকা থেকেও ফিরছে। ফেরির বিড়ম্বনা না থাকায় বিলাসবহুল বাসের সংখ্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। আরিচা ফেরি হয়ে গাবতলীতে আসা যাত্রীর সংখ্যা কমলেও পদ্মা সেতু হয়ে সায়েদাবাদের যাত্রী বেড়েছে।

হানিফ, সাকুরা ও ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণবঙ্গের দূরপাল্লার যাত্রীদের উপচেপড়া চাপ তৈরি হয়েছে সড়কে। সেটি মাথায় রেখে আগেই পরিবহনের সংখ্যা দেড়-দুই গুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি গাড়ির ট্রিপের সংখ্যাও দেড়গুণ বেড়েছে। আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা পর পর গাড়ি ছাড়া হচ্ছে, যা ২০ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

একই তথ্য জানিয়েছেন ঈগলের টিকিট কাউন্টারের তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহেল, সাকুরার মো. আনিস ও সুগন্ধার মো. শহীদ। তারা বলছেন, বরিশাল থেকে ছাড়া গাড়িগুলো সাড়ে তিন-চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। ভান্ডারিয়াসহ অন্যান্য রুটের ক্ষেত্রে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগছে।

বিআরটিসির বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ২৬ জুন থেকে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ৩টি রুটে প্রতিদিন ১৫টি বাস চলছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পুরনো বাসগুলো মেরামত করে সেবায় যুক্ত করা হয়। এসব বাস আগে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত আসা-যাওয়া করতো। এখন ১৫টি গাড়ির মধ্যে ১৪টিই এসি বাস। এগুলো গুলিস্তান পর্যন্ত আসছে।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই দূরপাল্লার রুটের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, যেন এই রুটে দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ফেরির কারণে আগে অনেক কোম্পানির গাড়ি বরিশালের রুটে আসতো না। এখন সেগুলো আসতে শুরু করেছে। সামনে আরও আসবে। কোম্পানিগুলো বিলাসবহুল নতুন বাসও আনার চিন্তা করছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে অন্তত পাঁচশ’ গাড়ি বেড়েছে। ঈদের সময় সড়কপথে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এখন চাপ কম।