কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন দুর্গা

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে আজ (৫ অক্টোবর)।  এদিন সকাল ১০টায় যথারীতি দশমীবিহিত পূজা শুরু হয়, যা বিকাল পর্যন্ত অশ্রুসিক্ত দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা এই মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, আজ সকালে দশমীবিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন শুরু হয় সারা দেশে। বিজয়ার শোভাযাত্রা নিয়ে চলছে প্রতিমা বিসর্জনের পালা। বিসর্জন শেষে শান্তিজল নিয়ে ঘরে ফিরবেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

প্রতিমা বিসর্জন করতে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হয়। এতে যোগ দিতে ঢাকার ২৪১টি মণ্ডপ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ঢাকঢোল পিটিয়ে পলাশীর মোড়ে জড়ো হন। এখান থেকে সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা যাবে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এরপর চলবে প্রতিমা বিসর্জন,  যা দুর্গাপূজার শেষ আনুষ্ঠানিকতা।

মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে দশমীর পূজা শেষে বিসর্জন শুরু হয়। তারপর সিঁদুর খেলা। দুপুরে  শুরু হয় শোভাযাত্রাসহ ওয়াইজঘাটে যাওয়ার প্রস্তুতি। এছাড়া মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগ নদীতেও প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবারের দুর্গোৎসব হচ্ছে। আজ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আয়োজন শেষ হবে। এখন পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছি। শেষ সময়ে মণ্ডপগুলোতে বিদায়ের সুর লক্ষ করা যাচ্ছে।’

এর আগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১২টায়। কেন্দ্রীয় এই মন্দিরে বিহিত পূজা এবং পূজায় অংশ নেন হাজারো পুণ্যার্থী। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানাতে ভক্তরা মত্ত হয়েছেন সিঁদুর খেলায়।

এ ছাড়া অন্যান্য মণ্ডপে সকাল থেকে চলেছে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, ভোগ-আরতিসহ বিভিন্ন আয়োজন। ৫ দিন ধরে সারা দেশে দুর্গোৎসব উপলক্ষে মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আজ সকালে বঙ্গভবনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। করোনার কারণে আয়োজনটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে করা হয়।

এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। রাজধানীতে ২৪২টি মণ্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপকে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বৃহত্তর মন্দির হলো সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, রমনা কালীমন্দির, উত্তরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পূজামণ্ডপ। এছাড়া ২ তারকাবিশিষ্ট ৮৬টি, এক তারকা ৭৭টি এবং সাধারণ শ্রেণির ৬১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।