গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়ম, বাকি ৯৪ কেন্দ্রেও একই চিত্র

কেবল ভোট বন্ধ হওয়া ৫১টি কেন্দ্র নয়, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের বাকি ভোটকেন্দ্রের প্রায় সবগুলোর চিত্রও একই ধরনের। এসব কেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিত জনগণের প্রবেশ, ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধ্যকরণ বা প্রভাবিতকরণ, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপনকক্ষের ছবি ধারণসহ নানা অনিয়মের তথ্য পেয়েছে। ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি বাকি ৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭টির সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব অনিয়ম পেয়েছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

তদন্ত কমিটি তাদের দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। এর আগে তদন্ত কমিটি ভোট বন্ধ হওয়া ৫১টি কেন্দ্রের সিটিটিভি ফুজেট বিশ্লেষণ, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, প্রার্থীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে গত ২৭ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানান, গাইবান্ধার উপনির্বাচনে স্থগিত ৫১টি কেন্দ্র বাদে বাকি ৯৪টি কেন্দ্র, যেগুলোতে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করেনি, সেই কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এর ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি ওই কেন্দ্রগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার সন্ধ্যায় ইসির কাছে জমা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় যে ৯৪টি ভোটকেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয় তার মধ্যে ৭টি কেন্দ্রের ফুটেজ তারা পাননি। ভোটের দিনে দৃষ্কৃতকারীরা জোর করে সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা কারণে এসব কেন্দ্রের ফুটেজ পাওয়া যায়নি। বাকি ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি কেন্দ্র বাদে সবগুলোতেই অনিয়ম দেখা গেছে। প্রায় সব গোপনকক্ষেই ভোটারের বাইরে অবৈধভাবে অন্য ব্যক্তিকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এর আগে যে ৫১টি কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্ত করা হয়েছিল সেখানেও সিসি টিভিতে একই চিত্র দেখতে পেয়েছিল ইসি। তবে ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সার্বিক চিত্র তুলে ধরলেও কোনও সুপারিশ তারা করেনি।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রথমে ৫১টি ভোটকেন্দ্র এবং একপর্যায়ে পুরো ভোটগ্রহণ মাঝপথে বন্ধ করে দেয় ইসি। ভোট চলাকালে ঢাকায় বসে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এসব ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষে (বুথ) ভোটার ছাড়া অবৈধভাবে অন্য ব্যক্তিদের অবস্থান করতে দেখা গিয়েছিল। একটি সংসদীয় আসনের পুরো ভোট বন্ধের ইতিহাস অতীতে দেখা যায়নি। পরে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটে অনিয়মের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা  মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিটি ইসিকে দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি দিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনাররা এখনও প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেননি। শিগগিরই এটি নিয়ে তারা বসবেন। দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কী ব্যবস্থা বা কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এসব বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। ব্যবস্থা দৃষ্টান্তমূলক হবে বলে তিনি জানান।