ছয় মাসে আন্তর্জাতিক রুটে ফাঁকা বিমানের ২৩ শতাংশ আসন

গত ছয় মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের ২৩ শতাংশ আসন ফাঁকা ছিল। এ সময়ে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬টি আসনের মধ্যে তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৮২টি আসন ফাঁকা ছিল। সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া বিমানের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

দেশের পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক রুটে গত ছয় মাসে টিকেট বিক্রি না হওয়ার কারণ এবং টিকেট বিক্রি সম্পর্কিত তথ্য চেয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণলায় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেয় বিমান।

বিমানের প্রতিবেদনে ৬৮টি গন্তব্যের ছয় মাসের আসন ফাঁকা থাকার তথ্য দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, গত জুন থেকে নভেম্বর এই ছয় মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে মোট আসন ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬টি। এর মধ্যে আসন বুকড ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৪টি। বাকি তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৮২টি আসন ছিল ফাঁকা। সব মিলে আসন ফাঁকা ছিল ২৩ শতাংশ।

অবশ্য সব রুটে আসন ফাঁকা থাকার চিত্র এক রকম নয়। কোনও কোনও রুটে খুব কম আসন ফাঁকা ছিল। আবার কোনও কোনও রুটে অর্ধেকের বেশি আসন ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে চীনের গোয়ানজু রুটে গত ছয় মাসে মোট আসন ছিল দুই হাজার ৬৭৫টি। এর মধ্যে যাত্রী ছিল এক হাজার ৩৭টিতে। বাকী এক হাজার ৬৩৮টি আসন ছিল ফাঁকা। অর্থাৎ এই গন্তব্যে ৬১ শতাংশ আসনই ফাঁকা ছিল।

মাসকাট (ওমান) থেকে ঢাকা রুটে ১৭ হাজার ৬৬৫টি আসনের মধ্যে ৯ হাজার ২৮৫টি আসন ফাঁকা ছিল।  এ রুটে ছিল ৫৩ শতাংশ আসন ফাঁকা ছিল। আবুধাবি থেকে ঢাকা রুটে আসনের ৪৫ শতাংশ ছিল ফাঁকা। অপরদিকে ঢাকা থেকে মাসকাট, চট্টগ্রাম থেকে মাসকাট, ঢাকা থেকে রিয়াদ, চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা এসব ফ্লাইট ছিল অনেকটা পরিপূর্ণ। এসব ফ্লাইটে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আসনে যাত্রী ছিল। তবে প্রতিবেদনে আসন খালি থাকার সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

বিমানে আসন ফাঁকা থাকলেও টিকেট পাওয়া যায় না, এই অভিযোগ বহু পুরোনো। জাতীয় সংসদেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। গত বছর জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) বিল’ তুলে বিমানের টিকেট নিয়ে সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেছিলেন, বিমানে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু সিট ফাঁকা থাকে। বিমানে যারা কাজ করেন, তারা বিমানকে বাপের সম্পত্তি মনে করেন। বিএনপির (পদত্যাগী) সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছিলেন, এজেন্সিগুলো নিজেরা ক্রেতা সেজে টিকিট বুক করে রাখে। তিন–চতুর্থাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। এতে ক্ষতি হয় বিমানের।

গত সেপ্টেম্বরে এক অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, টিকিটের জন্য আবেদন করে পাননি এমন কেউ যদি দেখেন, বিমান বাংলাদেশ আসন খালি রেখে গন্তব্যে রওনা হয়েছে, সেক্ষেত্রে যাত্রী সঙ্গে সঙ্গে যেন অভিযোগ করেন। টিকিট কারসাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।