শহরের লোকেরা আমাদের ক্ষেত বলতো: পরিকল্পনামন্ত্রী

‘আমি তো গ্রামের ছেলে। নগরের প্রতি আমার ব্যক্তিগত একটা দূরত্ব আছে। শহরের লোকেরা, গ্রামের লোকেরা ক্ষেত বলতো।’

রবিবার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘শিক্ষা, জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: অংশীজনের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

মন্ত্রী বলেন, কলেজে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, নাগরিক-সুশীল সমাজের ছেলেমেয়েরা আমাদের ক্ষেত বলতো। শহরও আমাদের গ্রামও আমাদের। এই সরকার গ্রামের দিকে মাথাটা একটু বেশি ঘুরিয়ে রেখেছে। গত কয়েক বছরের প্রকল্পগুলো দেখলে বোঝা যাবে। এর মধ্যে আমিও কিছু কেরানির পাওয়ার ইউস করেছি। মনে করেন, পেশকারের পাওয়ার যেখানে তার সুবিধা আছে, সেই মামলা আগে দেয়। আমিও সেই প্রকল্পগুলোকে আগে দিই, যেগুলো গ্রামের।

মডার্ন হওয়া অন্যায় কিছু নয় মন্তব্য করে এম এ মান্নান বলেন, বাংলা ভাষায় ‘আধুনিক’ শব্দটাকে নষ্ট করে ফেলেছি। মডার্ন হওয়া মানে সময়োপযোগী হওয়া। মানবজাতি মিলেমিশে যেখানে পৌঁছেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই আমার দায়িত্ব। না করে যদি ব্যাকওয়ার্ডে যাই, তাহলে হবে না। তারপরও আমি আশাহত নই। টিকে থাকার চিন্তাটাকে জিইয়ে রাখতে পারলেই আলোর সন্ধান পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছি।

শিক্ষায় বিনিয়োগ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আমরা টাকা বেশি খরচ করতে পারবো। তার আগে আমাদের দেখতে হবে টাকা কোথায় খরচ করছি। আমার গ্রামে যেখানে একটি স্কুল আছে, পরিষ্কার টয়লেট দিয়েছে, মাথার ওপর ফ্যান ঘোরে। তারপরও আমার স্কুলে বাচ্চাদের পাঠায় না কেন? নিশ্চয় এর কোনও শক্ত কারণ আছে। আমি বুঝে গেছি, স্কুলগুলো একটি ফরমাল ইনস্টিটিউশন হয়ে গেছে, ফরমাল প্রশাসন হয়ে গেছে। অন্য প্রতিষ্ঠানে গেলে সে দুই হাতে স্বাগত পায়, সম্মানের সঙ্গে বসা হয়, অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এটি আমাকে আঘাত করে।

এম এ মান্নান বলেন, আমাদের ইকোনোমি এখন ভালো। আমরা ব্যয় করবো, কিন্তু যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে ব্যয় করবো না। আবহমানকাল থেকে একটি প্রচলন ছিল—‘সরকার কা মাল দরিয়ামে ঢাল’। স্নেহ নেই, মমতা নেই, সরকারে মনে করে বাইরের গভর্নমেন্ট, কলোনিয়াল গভমেন্ট।

হাওরে বাঁধ নির্মাণ হবে না
হাওরের শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয় তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওরে স্কুলে যেতে সময় লাগে। স্কুলের জন্য নৌকা দিতেই হবে। আমরা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাওরে আমরা বাঁধ নির্মাণ করবো না, অলওয়েদার রোড নির্মাণ করবো না, মাছের ক্ষতি হয়, পানকৌড়ি মরে যায়, হাস উড়তে পারে না। তবে স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা থাকবে। এটি দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রগতিশীল অগ্রগামী মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন হাওরের স্কুলগুলো অন্য ডিজাইনে বানাতে হবে। নিচ দিয়ে পানি যাবে ওপরের দিকে দুই-তিন তলা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ক দেন, কিন্তু নিচে থেকে পাস হতে হতে বেলা পার হয়ে যায়।

চলতি বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়বে
চলতি বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্য ভাতা না বাড়লেও প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়বে। অন্য সব ভাতা ‘ইট ইজ নট আ বেতন’, এটা একটা সম্মানী। টাকা বেশি দিলে ওর ওপর ডিপেন্ট করবে, কাজে যাবে না। আমরা শুধু পান্তাভাত খেয়ে মাঠে যেতে পারি। বেশি দিলে ওই টাকাতে তার সময় কেটে যাবে। প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, সেটি সমাধান করতে হবে।