লন্ডনে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পার্লামেন্টারি ককাস আয়োজনের প্রস্তাব

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইউকে জলবায়ু চুক্তি: কপ২৮-এর অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সংসদীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আগামী নভেম্বরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় কপ২৮-এর আগে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের জলবায়ু সংসদ।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এটিই প্রথম কোনও গোলটেবিল বৈঠক।

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস ও হাউস অব কমন্সের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা গোলটেবিলে অংশ নিয়েছিলেন। তারা বাংলাদেশ-ইউকে জলবায়ু চুক্তির আলোকে চলতি বছরের মার্চে কপ২৮-এর জন্য দুই দেশের অভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, জলবায়ু সংসদ বাংলাদেশের আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক, শেখ তন্ময় ও আয়েশা খান বক্তব্য দেন।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের আবাসন ও গৃহহীনবিষয়ক মন্ত্রী ফেলিসিটি বুচান, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী কেরি ম্যাকার্থি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ভোক্তা ও শ্রমবাজারবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী সীমা মালহোত্রাসহ বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্য বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম উদ্বোধনী বক্তব্য দেন এবং কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার পৃষ্ঠপোষক ও গোলটেবিল বৈঠকের সহ-আয়োজক যুক্তরাজ্যের সাবেক জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ব্যারনেস ভার্মা স্বাগত বক্তব্য দেন।

বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং গ্লাসগোতে কপ২৬ চলাকালীন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি ক্ষয়ক্ষতি, জলবায়ু অর্থায়ন, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় বিনিয়োগ এবং নিম্ন কার্বন অর্থনীতিতে বাংলাদেশের রূপান্তর সহ কপ২৮-এ যৌথভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের জন্য চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের আবাসন ও গৃহহীনবিষয়ক মন্ত্রী ফেলিসিটি বুচান জলবায়ু অভিযোজন নেতৃত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি ব্রিটিশ অর্থনীতি ও সমাজে ক্রমাগত অবদান রাখার জন্য যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন।

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের দুর্বলতা মোকাবিলায় জলবায়ু অর্থায়ন ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সবুজ অবকাঠামো, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়ানোরও আহ্বান জানান তারা।

যুক্তরাজ্যের এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সফরকালে চলতি বছরের মার্চ মাসে ঢাকায় ঐতিহাসিক বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরের কথা স্মরণ করেন।

আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ুর চরম দুর্বলতা এবং কীভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উপকূলে ৮০০টিরও বেশি শেল্টার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের জলবায়ু সংসদের আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক কপ২৮-এর আগে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি সংসদীয় ‘ককাস’ গঠনের প্রস্তাব দেন।

এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যকে একত্রে বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মপরিকল্পনার জন্য কাজের সুপারিশ করেন।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।