প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

সরকারি প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে সবসময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়—সরকার প্রতিশ্রুত উন্নয়নকাজের অগ্রগতির খোঁজ-খবর নিতে হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে; নির্বাচনি অর্থবছর হলেও রাজস্ব আদায়ে কোনও ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না; রেমিট্যান্স আহরণে অধিকতর নজর দিতে হবে; রফতানি লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ বাড়াতে হবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ওসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে; অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। এছাড়া সততা ও দক্ষতার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীকে যুক্ত করে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে।

এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজেদের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মীদের অবহিত করবে। প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে ভার্চুয়ালি সভা করেও বিষয়টি তাদের অবহিত করা যেতে পারে।

সোমবার (২৪ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, অন্যান্য সচিবের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের আজকের সভায় আগে থেকে নির্ধারিত কোনও আলোচ্যসূচি ছিল না। এ কারণেই অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত কৌতূহল কাজ করেছে। প্রতি মাসেই একবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সভা করার নিয়ম রয়েছে। তবে সরকারের ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে মাহবুব হোসেন নিয়োগ পাওয়ার প্রায় সাত মাস পর আজকের এই সভা হলো। তাও আবার সেই সভা হলো অনেকটাই তড়িঘড়ি করে।

চলতি বছরের শেষে ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে বা আগামী বছরের শুরুতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবারের এই বৈঠক হলো বলে মনে করছেন সচিবদের কেউ কেউ। যদিও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এই বৈঠককে ‘সচিব কমিটির বৈঠক’ না বলে ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির নিয়মিত বৈঠক’ বলেই উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, অর্থ ছাড়, যেকোনও ধরনের কেনাকাটা, চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বা ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবেও সতর্ক করা হচ্ছে। ঠেকানো হয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের কাজও। সতর্কতার সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনা রয়েছে। অপ্রয়োজনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর সঙ্গে এবার যুক্ত করা হলো—রাজস্ব আদায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রফতানি আয় বাড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা। সব কিছুই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কাজের অগ্রগতি, দেশজুড়ে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দফতর-সংস্থার শূন্যপদ পূরণের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, সরকারের প্রকল্প বাছাই ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে সচিবদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্য ও বিনিয়োগ কোন দিকে যাচ্ছে—তা পর্যবেক্ষণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত বা মাঠ প্রশাসনের জন্য কোনও নির্দেশনা ছিল না বলে জানান মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এটি সচিবদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক।