এ বছরও খেলাধুলার উপযোগী করা যাচ্ছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গুলিস্তান এলাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে। ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নেওয়া প্রকল্পটি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ স্টেডিয়ামটিকে খেলাধুলার উপযোগী করার কথা ছিল। তবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় আবারও পিছিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে প্রকল্পটিতে সংশোধনী এনে এর বাস্তবায়ন সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এবার সেই মেয়াদও পিছিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গত ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য ইভেন্টের খেলা আয়োজনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামটিকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এতদিনেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, মুলত যেসব কারণে প্রকল্পটিতে সংশোধনী আনতে হয়েছে সেগুলো হলো—বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অঙ্গের আধুনিকায়নের জন্য নতুন কাজ যুক্ত করতে হয়েছে, সেসব কারণে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন কারণে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে, সেকারণে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। স্টেডিয়ামের কিছু অংশের সম্প্রসারণ করা হয়েছে, সেকারণেও এর ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। নতুন অংশ অন্তর্ভুক্তির কারণে এসব ব্যয় বৃদ্ধি এবং তা বাস্তবায়নে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এ কারণে প্রকল্পটিতে এসব সংশোধনী এনে একনেকের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে। ২৫ হাজার দর্শক গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবে। প্রকল্পটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় স্টেডিয়ামের গ্যালারি শেড নির্মাণ করা হবে। ফ্লাড লাইট ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। সিন্থেটিক অ্যাথলেটিক ট্র্যাক সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। স্টেডিয়ামে ২৩ হাজার ১০০টি গ্যালারির চেয়ার স্থাপন করা হচ্ছে। ৬৭৪ বর্গমিটার ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড (খেলার মাঠের দুইদিকে) স্থাপন করা হবে। মাঠ উন্নয়ন/ স্প্রিংলার সিস্টেম, মিডিয়া সেন্টার, এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন উন্নয়ন এবং নতুন মডিউল স্থাপন করা হবে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান গ্যালারিগুলোর টয়লেট উন্নয়ন অন্যান্য আনুষঙ্গিক পুর্তকাজ সম্পন্ন করা হবে।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশের খেলাধুলার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এবং জাতীয় স্টেডিয়ামগুলোর অব্যাহত উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করা আছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পটি তাই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণেই স্টেডিয়ামটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামটি খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ কারণে সেখানে সংস্কার প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন যেমন সম্ভব হবে, একইসঙ্গে ২৫ হাজার দর্শণার্থী গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন- আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগেই ভেন্যু তৈরির আশ্বাস ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর