ছেলেরা কেন পিছিয়ে তা জানতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের সময়ও এই বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করতে বলেছেন।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের অনুলিপি গ্রহণ করার পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই উদ্বেগের কথা জানান। আজ রবিবার (১২ মে) সকাল ১০টায় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছ থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলের অনুলিপি গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

সরকারপ্রধান বলেন, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। মেয়েদের হার অনেক বেড়েছে। প্রাথমিকে একসময় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী যেত, এখন ৯৮ শতাংশ মেয়ে স্কুলে যায়। আর এখানে (এসএসসির ফল) ফলাফল দেখে আমি হিসাব করছিলাম, প্রত্যেকটা বোর্ডে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত। মাত্র তিনটা বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা একটু বেশি। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। এটা একদিকে খুশির খবর। কারণ নারী শিক্ষার ওপর আমরা বেশি জোর দিয়েছি। এইচএসসি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট শিক্ষার্থী ২০ লাখ ৩৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা  ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন, ছাত্রী ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন।  

তিনি বলেন, কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, ছাত্রসংখ্যা কেন কম। কী কারণে ছাত্র কমে যাচ্ছে। পাসের হারেও অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে। সেটা খুব ভালো কথা। কিন্তু তারপরও আমি বলবো এই বিষয়টায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।

এসএসসির ফলের অনুলিপি গ্রহণের পর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: সংগৃহীত )

ছেলেদের হার কমার কারণ জানার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবিএসকে বলতে পারি জরিপের সময় এটা জানার চেষ্টা করতে। কী কারণে ছেলেরা কমবে? মেয়েরা বাড়লে খুশি হই। সমান সমান হলে ভালো। কিন্তু ছেলে কেন কমলো এটা জানতে হবে। ছেলেরা পিছিয়ে আছে কেন জানতেই হবে। এটা যার যার বোর্ডে খোঁজ নেবেন। কিশোর গ্যাং কালচার দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনও সময় গেছে যখন মাসের পর মাস গেছে, ছেলেমেয়েরা রেজাল্ট পায়নি। আমরা ৬০ দিনের মধ্যে তা দিতে পেরেছি। সাক্ষরতার হার বেড়েছে, শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তারপরও আমরা বলবো, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যারা বাকি আছে তাদের স্কুলে পাঠানো আমাদের দায়িত্ব। তবে সাদাসিধা এমএ-বিএ পাস করবে তা নয়। সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষায় পারদর্শী হবে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, সার্বিকভাবে শিক্ষিত হওয়ার জন্য যা যা দরকার সব শিখবে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে টিকে থাকার উপযোগী শিক্ষা আমরা চালু করতে চাই।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: সংগৃহীত )

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পাস করেছে তাদের ও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক সবাইকে আমার অভিনন্দন। যারা অকৃতকার্য হয়েছে, ফেল করেছে, তাদের বলবো মন খারাপ যাতে না করে। এবার হয়তো কোনও কারণে তারা পারেনি। তবে এ জন্য বাবা-মা যেন তাদের গালাগাল না করেন। তাদের মন এমনিতেই তো খারাপ। কেন সে পারলো না সেটা খুঁজে বের করে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হবে।

তিনি বলেন, বারবার পড় পড় বললে আগ্রহটা হারিয়ে যায়। ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের মেধা এমনিতেই বেশি। তাদের মেধা বিকাশের সুযোগটা দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৫ বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, মেয়েদের লেখাপড়ার হার বেড়েছে, কারিগরি শিক্ষার হার বেড়েছে। ৯৬ সালে ৭ ভাগের মতো পেয়েছিলাম কারিগরি শিক্ষা, এটা ২২ ভাগের মতো করেছি। এটা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিই। স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে ছেলেমেয়েদের এটা শেখাতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে তারা গড়ে উঠবে।