বর্ষায় ৮ কোটি ৩৩ লাখ গাছ লাগানো হবে: পরিবেশমন্ত্রী

এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। 

মঙ্গলবার (৪ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৪ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের বন, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ ১৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ৪০২ হেক্টর ব্লক এবং ৩০ হাজার ২৫২ সিডলিং কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান তৈরি এবং ১১ কোটি ২১ লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার চারা রোপণ করা হবে। সারাদেশে বৃক্ষের পরিমাণ ও বন খাতে কার্বনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য এ বছর জাতীয় বন জরিপ শুরু হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন করা হয়েছে। বননির্ভর স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশের প্রান্তিক ও পতিত ভূমিকে বৃক্ষাচ্ছাদনের আওতায় নিয়ে আসার একটি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৯ জন উপকারভোগীর মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ১১৪ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জবরদখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এতে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে এবং বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বনায়ন, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২২টি রক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ২৮টি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বনজ বৃক্ষ ও উদ্ভিদরাজির লাল তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। রক্ষিত এলাকায় আগ্রাসী উদ্ভিদ চিহ্নিত করে তার সংরক্ষণ কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা হালনাগাদ করা হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য এ যাবৎ মোট ৫৩টি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বন-বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতন তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে এই বছরই প্রথম ‘ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড’-এর আয়োজন করা হয়েছে।’

 

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা আয়োজন করা হয়েছে। আগামী বুধবার (৫ জুন) থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন পলাশ ও বেল গাছের দুটি চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিতব্য পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ১৩ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ দিবস পালন

দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় এবং ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্ক ও স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলার আয়োজনে করা হবে।

 

ভূমি রক্ষা

ভূমির অবক্ষয় মোকাবিলায় বাংলাদেশ জাতীয় রোডম্যাপ ২০২১-৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। ভূমি অবক্ষয় কমিয়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প যেমন টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করছে। ইটভাটায় টপ সয়েলের ব্যবহার কমাতে সরকারি নির্মাণ কাজে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। বায়ুদূষণকারী অবৈধ ইটভাটা, কারখানা ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কার্যক্রম, কালো ধোঁয়া নির্গমণকারী ও শব্দদূষণকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট, পাহাড় ও টিলা কর্তন, পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কাজ চলমান রয়েছে।