যে বিষয়ে চীনের সঙ্গে পরে আলাপ করতে চায় বাংলাদেশ

চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে এ মুহূর্তে আলোচনা করতে চায় না বাংলাদেশ। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রবিবার (৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জিডিআই নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি নিয়ে পরে আলাপ করবো, আজ নয়।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ঢাকা সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাদের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন এবং যুক্ত হতে অনুরোধ করেন। এবারের সফরে চীন তাদের ওই আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে।

তিব্বত ও তাইওয়ান বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি।’

উল্লেখ্য, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই চীনে সরকারি সফর করবেন। সফরে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

ঋণচুক্তি

রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য চীন থেকে ঋণ সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনও উত্তর দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রথমত কোনও ঋণচুক্তি বা সমঝোতা স্মারক আমাদের তালিকায় নেই। অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা হবে।’

ঋণের পরিমাণ নিয়ে আবার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ঋণের কোনও পরিমাণ নেই (দেয়ার ইজ নো অ্যামাউন্ট)। এ বিষয়ে কোনও চুক্তি হচ্ছে না। আমাদের একটি জেনারেল সমঝোতা হচ্ছে। যেহেতু অর্থনেতিক সহযোগিতা হবে, সেই সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের অগ্রাধিকারের নিরিখে এবং আমাদের মধ্যে সমঝোতা হলে তখন ব্যাংকিং বা অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা হবে। আপনি রিজার্ভের কথা বলছেন, আমাদের রিজার্ভ এখন ভালো আছে। রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন

চীনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি বলেছেন বাজেটারি সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেুখন, আমাদের কোনও প্রস্তাব নেই এবং সব প্রস্তাব আমরা সবসময় গ্রহণও করি না। আমাদের প্রয়োজনের নিরিখে এবং আমাদের প্যারামিটারগুলো (বিভিন্ন সূচক) সন্তুষ্ট হলে তখনই আমরা সেই সহায়তা গ্রহণ করি। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরে আবার অর্থায়ন করতে চেয়েছিল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা নেইনি।’

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিজার্ভ সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের পর মন্ত্রী বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকের তালিকায় এমন প্রস্তাবের কথা বলা নেই। এটি আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছি বলে আমার জানা নেই।’

তিস্তা প্রকল্প

বাংলাদেশের অনুরোধে তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন। তবে এই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করা হবে না। এই তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা যদি তারা আলোচনায় আনে, তাহলে আলোচনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদী দুই দেশের যৌথ নদী– বাংলাদেশ ও ভারতের নদী। এখন যৌথ নদী নিয়ে ভারত একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে এবং একইসঙ্গে ভারত থেকে একটি কারিগরি দল আসবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যৌথভাবে সমীক্ষা করে কীভাবে কী প্রয়োজন সেটি বিবেচনা করা হবে। যেহেুতু এটি যৌথ নদী এবং যাদের সঙ্গে এই যৌথ নদী, তাদের প্রস্তাব আছে, সুতরাং আমাদের সেই প্রস্তাবটি আগে বিবেচনা করতে হবে, স্বাভাবিকভাবে।’

চীনও একটি প্রস্তাব দিয়েছে এবং সেটিও খুব ভালো। কিন্তু যেহেতু ভারত একটি প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা মনে করি সেটি ভালো দিক, যেহেতু এটি আমাদের দুই দেশে যৌথ নদী বলে তিনি জানান।

বাণিজ্য বৈষম্য

বাণিজ্য বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বৈষম্য অনেক বেশি। এই বৈষম্য মেটানোর জন্য আমরা যাতে আরও বেশি করে কৃষি এবং অন্যান্য পণ্য রফতানি করতে পারি, এ ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধাসহ অন্যান্য যে বাধাগুলো আছে সেগুলো যাতে তুলে নেওয়া হয় এবং তাদের আমদানিকারকদের যাতে উৎসাহিত করা হয়, সেটি আমরা বলবো।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির যে সমঝোতা স্মারক নবায়নের কথা রয়েছে সেটি এ সফরে হবে না। বরং পরে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্ব দেবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য, তারা চীনে যাবে। সেই সময়ে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মন্ত্রী জানান।

আরও পড়ুন- 

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর: কোনও চুক্তি নয়, ২০টির বেশি সমঝোতার সম্ভাবনা

প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে যেসব বিষয়

পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহায়তা চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-ভারত-চীন সম্পর্ক: ‘জিরো সাম গেম’ নয়, সবার জন্য লাভজনক পরিস্থিতি চায় ঢাকা